শরীরে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নাম জানা কিছু ভিটামিন এবং পুষ্টির অভাব, যেমন আয়রন, ভিটামিন বি১২, এবং ফলেট, এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। যখন এই পুষ্টিগুলি দেহে প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে, তখন শরীর তাপ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় এবং এর ফলে আপনি অন্যদের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন।
আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য। এটি রক্তকণায় থাকা একটি প্রোটিন যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকে না, তখন পেশি এবং টিস্যুগুলি যথেষ্ট তাপ উৎপন্ন করতে পারে না।
একে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা বলা হয়, যা ঠান্ডা অনুভব, দুর্বলতা, এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। দ্য ল্যানসেট হেমাটোলজি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আয়রন ঘাটতি রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
ভিটামিন বি১২ রক্তকণা তৈরি এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এই ভিটামিনের অভাব হলে শরীরে সুস্থ রক্তকণা তৈরি বাধাগ্রস্ত হয় এবং এর ফলে ভিটামিন বি১২ ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় হাত-পা ঠান্ডা হওয়া এবং শরীরজুড়ে অক্সিজেনের অপর্যাপ্ত প্রবাহের মতো সমস্যা হতে পারে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন এর গবেষণা অনুযায়ী, ভিটামিন বি১২-এর অভাব থার্মোরেগুলেশনকে দুর্বল করে তোলে এবং ঠান্ডার সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়।
ফলেট (ভিটামিন বি৯) ঘাটতির প্রভাব- ফলেট বা ভিটামিন বি৯ ভিটামিন বি১২-এর সঙ্গে একত্রে কাজ করে রক্তকণা তৈরি করতে। ফলেটের অভাবে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং এর ফলে ঠান্ডা অনুভব, ক্লান্তি, এবং অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতির মতো সমস্যা দেখা দেয়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এর মতে, ফলেট ঘাটতিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই টিস্যুতে অক্সিজেনের অভাবে ঠান্ডা অনুভব করেন।
ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি আয়রন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করেন, তবুও ভিটামিন সি-এর অভাবে তা সঠিকভাবে শোষিত নাও হতে পারে। এর ফলে রক্তাল্পতা এবং ক্রমাগত ঠান্ডা অনুভবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি আপনি অন্যদের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন, তবে এটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার একটি ইঙ্গিত হতে পারে, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, রেনডস ডিজিজ, বা উল্লেখযোগ্য পুষ্টি ঘাটতি। রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফলেট, বা ভিটামিন সি-এর অভাব আছে কিনা। এরপর উপযুক্ত চিকিৎসা বা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।