১৯৫৩ সালের ২৯ মে সকাল সড়ে এগারোটায় প্রথমবারের মতো এভারেস্টে আরোহণ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের দুঃসাহসী শেরপা তেনজিং নোরগে। কী করেছিলেন সেদিন ভারতের গর্ব তেনজিং এভারেস্টে উঠে? আজ জানা যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা।

এভারেস্টের চূড়ায় তোলা সমস্ত ফটোতে তেনজিং দৃশ্যমান ছিলেন। এর কারণ তেনজিং ছবি তুলতে জানতেন না। তেনজিং হিলারির ছবি তুলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।

এই সাফল্যে তেনজিং এভারেস্টে মিষ্টি খাওয়ান। তেনজিং তার পকেটে রাখা মিষ্টি এবং কন্যা নিমার পেন্সিলটি বের করে তুষারের গায়ে পুঁতে দেয়। তেনজিং বলেন, “আমি ভেবেছিলাম আমরা তো বাড়িতে আমাদের প্রিয়জনদের মিষ্টি দিই। এভারেস্টও সবসময় আমার কাছে প্রিয়। আর আজ তো সে একেবারে আমার কাছে। আমি তাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে তুষার দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম।”

অত্যন্ত সহজ-সরল তেনজিং সর্বদা হিলারিকে এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম পা রাখার কৃতিত্ব দেন। তেনজিং-এর নিজের কথায়, “আমি তখন প্রথম বা দ্বিতীয় নিয়ে ভাবছিলাম না। আমি মনে করিনি যে সামনে একটি সোনার আপেল গাছ রয়েছে এবং হিলারিকে সরিয়ে সেটি আমিই দখল করব। আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম এবং একসময় শৃঙ্গে পৌঁছালাম। হিলারি প্রথমে আসেন এবং তারপর আমি।”

এই এভারেস্ট অভিযানের নেতা ছিলেন কর্নেল হান্ট। হান্ট নিজেই নেপথ্যে থেকে সফলভাবে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তিনি চাইলে পিক ক্লাইম্বিং দলের অংশ হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি দুটি সেরা দল বানিয়েছিলেন। প্রথম দল ছিল বোর্ডিলন, ইভান্সের। দ্বিতীয় হিলারি ও তেনজিংয়ের।

বোর্ডিলন এবং ইভান্স শিখরে পৌঁছাননি। নিচে এসে তিনি হিলারি এবং তেনজিংকে উপরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। ম্যাচ জেতার কাছাকাছি থাকা একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যেভাবে একজন নতুন ব্যাটসম্যানকে ব্যাখ্যা করেন এবং উৎসাহিত করেন ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। চূড়ায় আরোহণের সময় এই টিপস তেনজিং এবং হিলারির জন্য খুব দরকার ছিল।

আরোহণের আগের রাত এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগের দু’জনের জন্যই খুব বিপজ্জনক ছিল। প্রবল তুষারঝড় হচ্ছিল। রাতে হিলারির জুতো তাবুর বাইরে রয়ে গিয়েছিল। পরের দিন সকালে তিনি দেখেছিলেন তার জুতো বরফের মধ্যে জমে গিয়েছে।

আরোহণ যখন প্রায় শেষের পথে সেই সময় তাদের সামনে একটি খাড়াই পাহাড় ছিল। সেটি ছিল প্রধান বাধা কারণ ওই খাড়াই পাহাড়ের পথ ছাড়া অন্য কোনও যাওয়ার পথ ছিল না। যা ছিল তা অনেক দীর্ঘ, এভারেস্টে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যেত। এইসময় হিলারি তার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করেন এবং পাথরের ফাটল দিয়ে পথ তৈরি করেন। সেই পথ ধরে প্রথমে হিলারি তারপর তেনজিং তাদের পিছু পিছু যান। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে সকাল ১১:৩০ টায়, তাঁরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে পৌঁছেছিলেন। সেখানে হিলারি কুঠার হাতে তেনজিংয়ের ছবি তোলেন।

তেনজিং নোরগেকে ভারত, নেপাল এবং ব্রিটেন সরকার পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করেছিল। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার নোরগেকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করেছিল, ইংল্যান্ডের রানি তাঁকে ‘জর্জ মেডেল’ এবং নেপাল সরকার ‘নেপাল তারা’ দিয়ে সম্মানিত করেছিল।

১৯৫০ এবং ১৯৫১ সালে আমেরিকা এবং ব্রিটেন কর্তৃক সংগঠিত প্রচারাভিযানে তেনজিংকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু উভয় অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল।

তেনজিং ১৯৩৩ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালের ৯ মে দার্জিলিংয়ে তিনি মারা যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here