আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে উত্তাল সারা বাংলা। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ নিয়ে কোনও মন্তব্য নয়। মঙ্গলবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদের এমন নির্দেশই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এই আন্দোলনের বিষয়ে যা বলার তা শুধু তিনিই বলবেন। মন্ত্রীদের শুধুই নিজের এলাকায় কাজে মন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের মুখপাত্রদেরও এই বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। তবে দলীয় মুখপাত্রদের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ শুধুমাত্র মঙ্গলবারের জন্য।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ছ’দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার পক্ষ এই ছ’দফা দাবি মেটানো না-হলে অবস্থান তাঁরা চালিয়ে যাবেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল। এই আবহে মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় নবান্নে। সূত্রের খবর, সেখানেই মন্ত্রীদের আরজি কর-কাণ্ড, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি এবং সাধারণ মানুষের আন্দোলন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলতে বারণ করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে যা বলার, তিনিই বলবেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাউকে কিছু বলতে হবে না। কেউ মুখ খুলবেন না। পুজো আসছে। নিজের নিজের এলাকায় থেকে কাজে মন দিতে বলেছেন। এলাকার পরিবেশ, পরিস্থিতি যাতে ভাল থাকে, সে দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, কোনও কোনও এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কে কী বলছে, তাতে কান দিতে বারণও করেছেন।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি নিয়ে ইতিমধ্যেই শাসকদলের নেতা, রাজ্যের মন্ত্রীদের একাংশ মুখ খুলেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে এই দাবিই করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই কর্মবিরতির কারণে রাজ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফা চেয়েছেন। তাঁরা দাবি করছেন, ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এই আবহে মন্ত্রীদের মন্তব্যের কারণে নতুন করে যাতে বিতর্ক তৈরি না হয়, সে কারণেই কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে, তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। ৯ অগস্ট থেকেই জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। এর মাঝেই আরজি হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কোন্ননগরের ওই যুবক বিক্রম ভট্টাচার্যের মা দাবি করেছেন, চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর ছেলের। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরেই ওই যুবক ঠিক মতো চিকিৎসা পাননি। এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার আরজি কর-কাণ্ডের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দেয়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে জুনিয়র ডাক্তারদের। কিন্তু তাঁরা পাঁচ দফা দাবিতে অনড়। জুনিয়র ডাক্তারেরা যে পাঁচ দফা দাবির কথা তুলেছেন, সেগুলি হল— প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও এক দফা। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন মন্ত্রীদের।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১ তারিখে রাজ্যের নতুন মুখ্যসচিব হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন মনোজ পন্থ। তাঁকে নিয়োগের পর এই প্রথম মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠক হল। প্রসঙ্গত, সোমবারই নবান্নে দফতর ভিত্তিক পর্যালোচনা বৈঠক সেরেছেন মমতা।