অল্প সময়ে মেদ ঝরাতে শরীরচর্চার পাশাপাশি, পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই রোজের ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে দেন অনেকে। শুধু মিষ্টিই নয়, ভাত-রুটি সবই বন্ধ। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে কার্বোহাইড্রেট না গেলে, তা শরীরে জন্য ভাল না-ও হতে পারে।
পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, সমস্ত শারীরবৃত্তীয় পরিচালনার জন্য প্রতি দিন শরীরে নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের মতো জরুরি উপাদানগুলির জোগান দিতেই হবে। পম্পিতা বলেন, ‘‘ওজন ঝরানোর ডায়েটে বয়স এবং শারীরিক সুবিধা-অসুবিধা বুঝে ব্যক্তিবিশেষে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা নির্ধারণ করেন পুষ্টিবিদেরা। কিন্তু পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া, হঠাৎ খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে দিলে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। খুব প্রয়োজন না হলে আমরা ‘নো-কার্ব ডায়েট’ করার পরামর্শ দিই না রোগীকে।’’
ওজন কমানোর লক্ষ্যে খাবারের তালিকা থেকে কার্বোবাইড্রেট বাদ দিলে শরীর এবং মনের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে?
১) ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ধরে থাকে? ভেবে দেখুন শরীরে শর্করার অভাব হচ্ছে না তো? কারণ, মস্তিষ্ক তার সব কাজ পরিচালনা করার জন্য শর্করার উপর নির্ভর করে। শুধু তা-ই নয়, শরীরে সেরেটোনিন হরমোন ক্ষরণেও সহায়তা করে কার্বোহাইড্রেট। তাই কার্বের ভাঁড়ারে টান পড়লেও কিন্তু মনখারাপ বা হঠাৎ উদ্বেগ বাড়তে পারে।
২) যে কোনও কাজ করতে গেলে যে শক্তির খরচ হয়, তার বেশির ভাগই আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। কিন্তু খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে, শরীর সেই পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। ফলে কায়িক পরিশ্রম করতে গেলে শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগে।
৩) ডায়েট করা শুরু করলে অনেকেই প্রথম দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তালিকা থেকে কার্ব এবং ফাইবারজাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার ফলে এই সমস্যা হতেই পারে।
৪) কার্বোহাইড্রেট একেবারে ছেড়ে দিলে ঘন ঘন খিদে পায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বোহাইড্রেট অপরিহার্য। কার্বোহাইড্রেটের অভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এর ফলে গ্লুকোজের অন্যান্য উৎস যেমন চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার প্রতি টান বাড়ে।
৫) কার্বোহাইড্রেট খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলে অনেক মহিলার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে। শরীরে কার্বোহাইড্রেট না গেলে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। তাই ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
‘নো-কার্ব ডায়েটের’ বদলে ‘লো-কার্ব ডায়েট’ করার পরাপর্শ দেন বেশির ভাগ পুষ্টিবিদেরা। তবে যে কোনও ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।