রাজস্থান শুধুমাত্র দুর্গ এবং ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত নয়, এটি বহু ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তাদের পবিত্র তীর্থস্থানগুলির আবাসস্থলও। আরাবল্লির কোলে নাথদ্বারাতে এমনই একটি তীর্থস্থান রয়েছে। এই বিশিষ্ট বৈষ্ণব তীর্থস্থানে শ্রীনাথজি মন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সাত বছরের ‘শিশু’ অবতার রূপে বিরাজমান। ঔরঙ্গজেবও মথুরা জেলায় শ্রীনাথজির মূর্তি ভংতে পারেননি। তারপর মেবারের রানা গোবর্ধনধারী শ্রীনাথজির মূর্তি স্থাপন করে মন্দির তৈরি করেন।

নাথদ্বারায় প্রতিষ্ঠিত ভগবান শ্রীনাথজির দেবতাকে মূলত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রূপ বলে মনে করা হয়। রাজসমন্দ জেলায় অবস্থিত নাথদ্বারার আশেপাশের এলাকা প্রাকৃতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ। শহরটি আরাবল্লী রেঞ্জের কাছাকাছি এবং বনস নদীর তীরে অবস্থিত। উদয়পুর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে নাথদ্বারা অবস্থিত। ভগবান শ্রীনাথজির মন্দিরের কারণে নাথদ্বারা দেশ-বিদেশে একটি বিখ্যাত ধর্মীয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত।

মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেব মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। তাই তিনি তাঁর রাজত্বকালে মন্দির ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যথারীতি মথুরা জেলায় অবস্থিত শ্রীনাথ মন্দির ভাঙার কাজও শুরু হয়। কিন্তু শ্রীনাথজির মূর্তির কোনও ক্ষতি হওয়ার আগেই মন্দিরের পুরোহিত দামোদর দাস বৈরাগী মূর্তিটিকে মন্দির থেকে বের করে আনেন। দামোদর দাস বল্লভ সম্প্রদায়ের ছিলেন এবং তিনি বল্লভাচার্যের বংশধর ছিলেন। তিনি শ্রীনাথজির মূর্তিটি গরুর গাড়িতে রেখেছিলেন এবং তারপরে অনেক রাজাকে শ্রীনাথজির মন্দির তৈরি করে তাতে মূর্তি স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের ভয়ে কেউ তার প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত, দামোদর দাস বৈরাগী মেবারের রাজা রানা রাজ সিংকে বার্তা পাঠান, কারণ রানা রাজ সিং আগেই ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

এর সূত্রপাত অবশ্য ১৬৬০ থেকে। ঔরঙ্গজেব কিষাণগড়ের রাজকন্যা চারুমতিকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠালে চারুমতি স্পষ্টভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারপর রাতারাতি রানা রাজ সিংহকে বার্তা পাঠান। রানা বিনা বিলম্বে কিষাণগড়ে এসে চারুমতীকে বিয়ে করেন। এই কারণে আওরঙ্গজেব রানা রাজ সিংকে নিজের শত্রু মনে করতে শুরু করেন। রাজ সিং ঔরঙ্গজেবকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন যে তিনি গরুর গাড়িতে রাখা শ্রীনাথজির মূর্তিটি কেউ স্পর্শ করবে না। মন্দিরে পৌঁছানোর আগে ঔরঙ্গজেবকে এক লক্ষ রাজপুতকে মোকাবেলা করতে হবে।

সেই সময়ে যোধপুরের কাছে চৌপাসনি গ্রামে শ্রীনাথজির মূর্তি ছিল গরুর গাড়িতে। ফলে বহু মাস ধরে শ্রীনাথজির মূর্তি গরুর গাড়িতে পুজো করা হত। এই চৌপাসনি গ্রামটি এখন যোধপুরের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। যেখানে গরুর গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আজ শ্রীনাথজির একটি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। কোটা থেকে১০ কিমি দূরে শ্রীনাথজির চরণ পাদুকাগুলি সেই সময় থেকে আজ অবধি ওখানেই রাখা হয়েছে, তাই স্থানটি চরণ চৌকি নামে পরিচিত।

পরে চৌপাসনী থেকে প্রতিমা সিহারে আনা হয়। ১৬৭১ সালের ডিসেম্বরে, রানা রাজ সিং নিজে সিহার গ্রামে শ্রীনাথজির মূর্তিগুলিকে স্বাগত জানাতে গ্রামে গিয়েছিলেন। ১৬৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মন্দিরের নির্মাণ কার্য শেষ হয় এবং মন্দিরে শ্রীনাথজির মূর্তি স্থাপন করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here