মানব মননের তল খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। মনের কোথায় যে শুরু আর কোথায় শেষ, তা বোঝা বড়ই দুষ্কর। ভাবুন তো, আপনাকে তুলে নিয়ে গেল কেউ, মুক্তিপণ হিসাবে টাকা চাইলো, টাকা পেয়ে আবার ছেড়েও দিল, কিন্তু আপনার আর পরিজনদের মাঝে ফিরতে ইচ্ছা করল না। কেন হয় কেমন? মনের এমন ভাব হওয়া কি খুব স্বাভাবিক? মনের এই পরিবর্তিত অবস্থার নামই স্টকহোম সিনড্রোম। অপরাধীর প্রতি ভিকটিমের সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠা, এক কথায় এই হল স্টকহোম সিনড্রোম।
১৯৭৩ সালে যখন চারজনকে অপহরণ করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত একটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায়, তখন পর্যন্ত এর সাধারণ নাম ছিল “Capture bonding syndrome”।
দিনটি ছিল ১৯৭৩ সালের ২৩ অগাস্টের সকালে স্টকহোমের এক ব্যাঙ্কে অপরাধীরা ঢুকে বন্দুক ফায়ার করে ঘোষণা করল যে “The party has just begun”। দুজন ডাকাত তখন পরবর্তী প্রায় ১৩১ ঘন্টার জন্যে চারজনকে হাইজ্যাক করল, যার মধ্যে তিনজন ছিলেন মহিলা এবং একজন পুরুষ। এই চারজন মুক্তি পাওয়ার পর থেকে অদ্ভুত ব্যবহার করতে শুরু করে। এই ঘটনাই স্টকহোম সিনড্রোম নামে পরিচিত।
মুক্তি পাবার পর গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকারে বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা মানসিকভাবে তাদের অপহরণকারীদের সমর্থন করা শুরু করেছে এবং মনে করছে আইনরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করতে থাকলো যে, অপরাধীরাই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
তারা শুধু অপরাধীদের কোর্টে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকারই করেনি, বরং তাদের মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করে। এমনকি তাদের মধ্যে একজন মহিলা অপহরণকারীদের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্পষ্টভাবে এই ঘটনাটিতে অপরাধীদের সাথে অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।
অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তির মনের এই অবস্থাকে স্টকহোম সিনড্রোম বলে ডাকা শুরু হয়।