ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে অনেক বিলাসবহুল ভবন ও হোটেল নির্মিত হয়েছিল। সেগুলি বড় বড় ব্রিটিশ আধিকারিক ও ভাইসরয়রা ব্যবহার করতেন। এছাড়া ইংল্যান্ড থেকে ভারতে বেড়াতে আসা ব্রিটিশরাও এই ভবনগুলোতে থাকতেন। তবে স্বাধীনতার পর এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেইসব ভবন ও হোটেল এখনও টিঁকে রয়েছে। অনেক ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে, কিছু হোটেল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

সেই সময়ে নির্মিত অনেক হোটেল আজ তাদের কাঠামোগত সৌন্দর্যের থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার জন্য অধিক পরিচিত বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এইসব হোটেল ভূতের আস্তানা।

মর্গ্যান হাউজ (কলকাতা)

মর্গ্যান হাউজ পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পংয়ে অবস্থিত। এই হোটেলের কাঠামো অস্কার ওয়াইল্ডের বিখ্যাত বই ‘দ্য ক্যান্টারভিল ঘোস্ট’-এর প্রাসাদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই হোটেলটি ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। হোটেলটি যত পুরনো হয় তত এর সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকে রহস্যময় গল্প। প্রেতবিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই হোটেলে আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। হোটেলে যারা এসেছেন তাঁরা অদ্ভুত কিছু ঘটনার অভিযোগ করেছেন। মর্গ্যান হাউজ ১৯৩০ সালে তৈরি করিয়েছিলেন ব্রিটিশ অফিসার জর্জ মর্গ্যান। কিন্তু স্ত্রী লেডি মর্গ্যানের মৃত্যুর পর বাংলোটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। শোনা যায়, লেডি মর্গ্যানের আত্মা এখানে বিচরণ করেন।

ব্রিজ রাজ ভবন (কোটা)

ব্রিজ রাজ ভবন রাজস্থানের কোটা শহরে অবস্থিত। এই হোটেলের ইতিহাস ভারতে ব্রিটিশদের সঙ্গেও জড়িত। মেজর চার্লস বার্টন নামে এক ব্রিটিশ অফিসার একসময় এই ভবনে থাকতেন। তাঁর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন এই ভবনের রহস্যময় কাহিনী। এর ভবনটি উনিশ শতকে নির্মিত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত হয়। এত বছর পরেও এই হোটেলটি ভাল অবস্থায় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হোটেলের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বহু রহস্যময় কাহিনী। ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের সময় এই হোটেলে চার্লস বার্টন এবং তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। জনশ্রূতি, আজও এখানে মেজরের ভূত বিচরণ করে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মধ্যরাতে এখানে প্রতিনিয়ত অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে।

হোটেল স্যাভয় (মুসৌরি)

উত্তরাখণ্ডের মুসৌরিতে অবস্থিত স্যাভয় হোটেল ভারতের ঐতিহাসিক হোটেলগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ১৯০২ সালে স্যাভয় নির্মিত হয়। সুন্দর হোটেলটিতে রাজা-মহারাজা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরাও থেকেছেন। এর সৌন্দর্যের পাশাপাশি, এই হোটেলটি ভারতের নির্বাচিত ভুতুড়ে হোটেলগুলির মধ্যেও গণনা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে একজন ব্রিটিশ মহিলার আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ান। ওই মহিলার নাম ছিল লেডি গার্নেট ওরমে। তিনি ১৯১১ সালে এখানে বসবাস করতে এসেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর লেডি গার্নেট রহস্যজনকভাবে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কারণ আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই ব্রিটিশ নারীর আত্মা হোটেলে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যার পর হোটেলের কিছু কিছু ঘর থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়।

রাজ কিরণ হোটেল (লোনাভালা)

লোনাভালার রাজ কিরণ হোটেল বেশ কিছু ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে লাইমলাইটে এসেছিল। এই হোটেলে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই হোটেলের রিসেপশনের পেছনদিকের একটি ঘর রয়েছে, যেখানে রয়েছে ভূতের আখড়া। তাই এই ঘরটি বেশিরভাগ সময় ফাঁকাই থাকে। ঘরে কেউ থাকতেও চায় না। রাতে এই ঘরে ঘুমানোর সময় কোনো অদৃশ্য শক্তি চাদর টেনে নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেক অতিথি। এছাড়া রাতের বেলায় এখানে ভীতিকর নীল আলোও দেখা যায়। এই অদ্ভুত ঘটনাগুলি এই হোটেলটিকে ভুতুড়ে স্থানের মধ্যে একটি করে তুলেছে।

মুম্বইয়ের তাজ হোটেল

উপরোক্ত স্থানগুলি ছাড়াও, মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলের সঙ্গেও অনেক রহস্যময় গল্প জড়িয়ে রয়েছে। হোটেলে থাকতে আসা পর্যটক ও কর্মরত কর্মীরা এখানে অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। হোটেলটি ডিজাইন করেছিলেন WA চেম্বার্স, একজন ব্রিটিশ স্থপতি, যিনি হোটেলের ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করার পর ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু যখন তিনি এখানে ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখেন যে হোটেলটি তাঁর নির্দেশের বিপরীতে নির্মিত হয়েছিল। এসব দেখে হোটেলের পঞ্চম তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন স্থপতি। বিশ্বাস, চেম্বার্সের আত্মা এখনও এই হোটেলে ঘুরে বেড়ান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here