গত ২৪ ঘণ্টায় তা ক্রমশ গোটা পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে আরজিকরের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চেয়ে আন্দোলন। এই আন্দোলন চলছে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে। সেখানে কোনও রঙ নেই, কোনও দলীয় পতাকা নেই। সারা রাজ্য জুড়ে চলা এই আন্দোলনে, মিছিলে পা মিলিয়েছেন বহু তৃণমূল করা পরিবারের মহিলারা। আর তাতেই যেন সিদুঁরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে শাসকদল।

২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’ অভিযানকে ঘিরে সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। বামেদের তাবড় তাবড় নেতারা এর নামকরণ করেছিল ‘অপারেশন সূর্যোদয়।’ কিন্তু এই সূর্যোদয় মানতে পারেনি বহু মানুষ। কলকাতার রাজপথে নেমেছিল নাগরিক সমাজ। তাদের মধ্যে ছিলেন অনেক সিপিএম নেতার ছেলেমেয়েরাও ছিলেন। এবার শুধু লাল বদলিয়েছে সবুজে। জানা গিয়েছে, হুগলির এক তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তাঁর এলাকায় স্কুটি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মধ্যরাতে রাস্তায় নামার আন্দোলনের প্রচার করছেন। ফলে তৃণমূল এখন যথেষ্ট ভীত সন্ত্রস্ত। এদিকে ‘বান্ধবী’ তো কোনও দলের পতাকা না নিয়েই প্রচার করছেন, ফলে বারণও করা যাচ্ছে না।

কলকাতা পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোমা চৌধুরী ফেসবুকে অন্তত ১৪টি জায়গার জমায়েতের পোস্টার পোস্ট করে লিখেছেন, ‘নারীদের সম্মান, প্রাণ বাঁচাতে দলবদ্ধ হোন।’ কলকাতা পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের স্ত্রী মঙ্গলবার মানিকতলা থেকে আরজি কর পর্যন্ত হওয়া নাগরিক মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। মঙ্গলবারের নাগরিক মিছিলে ছিলেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়, পিয়া চক্রবর্তী, মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।

তবে আন্দোলনবিরোধী পোস্টও তো চলছে। তৃণমূলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় পাল যেমন লিখেছেন, ‘যে মহিলা রাত ৩টে ৫০-এর গেদে লোকাল বা ৩টে ২০-র প্রথম শান্তিপুর লোকাল ধরে বাজারে সব্জি বিক্রি করতে আসে এই কলকাতা শহরে, সে রোজ মধ্যরাতে এই শহরের রাস্তাটাকে দখল নেয়। যে মহিলারা সেক্টর ফাইভ থেকে রাত ২টোয় বাড়ি ফেরে, সে রোজ মধ্যরাতে এই রাস্তার দখল নেয়। সরকারকে বদনাম করতে গিয়ে এই শহরটাকে বদনাম করছেন। আমাদের সবার বাড়িতে মা, বোন, স্ত্রী আছে। একটা নারকীয় ঘটনার জন্য প্রতিবাদ করুন। সোচ্চার হন। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলুন। শুধু শহরটাকে ছোট না করে।’

একই সুর শোনা গিয়েছে কুণাল ঘোষের কথাতেও। তিনি আবার লিখেছেন, ‘মনে রাখুন, রাত মহিলাদের দখলেই থাকে বাংলায়। অসংখ্য মা, বোন বিভিন্ন পেশায় রাতভর কাজ করেন। অনেকে ভোররাত, মাঝরাতে কত দূর থেকে যাতায়াত করেন। বিচ্ছিন্ন খারাপ ঘটনা দিয়ে সার্বিক ভাবে বাংলাকে ছোট যারা করছে, তারা অরাজনীতির মোড়কে রাজনীতি করছে। ভোটে হারা অতৃপ্ত আত্মাগুলোর আবেগের অভিনয় চলছে। এদের মুখোশ নয়, মুখ দেখে বিচার করুন।’

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে সমাজমাধ্যমে ওই আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। যাঁরা সেই আন্দোলনের আহ্বায়ক, তাঁরা কেউই রাজনৈতিক দলের কেউ নন। প্রথম যে পোস্টারটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাতে স্বাধীনতা দিবসের আগে, অর্থাৎ ১৪ অগস্ট (বুধবার) রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে মেয়েদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সোমবার রাত থেকেই সেটি অন্য মাত্রা পেতে শুরু করে। মঙ্গলবার তা গোটা বাংলার মানচিত্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here