দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। কেন পশুরাজ দেবীর বাহন হয়েছিলেন জানেন? এর পেছনে রয়েছে এক গল্প।
কালিকাপুরাণ মতে শ্রীহরি দেবীকে বহন করছেন। এই হরি শব্দের এক অর্থ সিংহ। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লেখ আছে গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে সিংহ দান করেন। শিবপুরাণ বলে, ব্রহ্মা দুর্গাকে বাহনরূপে সিংহ দান করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধের সুবিধা।

অন্য একটি কাহিনি বলে, শিবকে স্বামী হিসেবে লাভ করতে দেবী পার্বতী ১০০০ বছর ধরে তপস্যা করেছিলেন। এই প্রবল তপস্যার কারণে দেবীর রং কালো হয়ে যায়। বিয়ের পর একদিন শিব পার্বতীকে কালী বলে সম্বোধন করায় কৈলাস ত্যাগ করে ফের তপস্যায় মগ্ন হয়ে যান অভিমানিনী দেবী। সেই সময় দেবীকে শিকার করার ইচ্ছায় এক ক্ষুধার্ত সিংহ তাঁর দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু তপস্যা মগ্ন দেবীর উপর আক্রমণ করবে না ভেবে তাঁর তপস্যা ভঙ্গের অপেক্ষায় সেখানেই চুপ করে বসে থাকে ওই সিংহ। এর মধ্যে অনেক বছর কেটে যায়। কিন্তু সিংহ তার নিজের জায়গা থেকে নড়ে না। এদিকে পার্বতীর তপস্যা সম্পন্ন হওয়ার পর গৌরবর্ণা দুর্গা আবির্ভূতা হন এবং তাঁর শরীরে মরা কোষ থেকে কালো রঙের দেবী কৌশিকী আবির্ভাব হয়। যে সিংহটি দেবীকে শিকার হিসেবে খেতে এসেছিল, তাকেই বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন দেবী। কারণ দেবীর জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছিল সে।

পুরান কথা বাদ দিয়ে একটু যুক্তি দিয়ে ভাবলেও কিন্তু উত্তর মেলে। দেবী দুর্গার সঙ্গে সিংহের স্বভাব প্রকৃতিগত অনেক মিল রয়েছে। দেবী বিশ্ব সংসারের ধাত্রী, সম্রাজ্ঞী। সিংহ পশুরাজ্যের সম্রাট। দেবী অস্ত্রধারিণী,সিংহও নখ-দন্তধারী। দেবী জটাজুটযুক্ত, সিংহ কেশরযুক্ত। সিংহ এক মহাবীর্যবান পশু। দেবী সর্বশক্তিধারিণী।

সিংহের শক্তি, সাহস ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাই মিশে যায় ত্রিভূবনকে দেবীর রক্ষা করতে এগিয়ে আসার মধ্যে। মহিষাসুরের বিরুদ্ধে সহজে জয় পাননি দেবী। প্রচণ্ড যুদ্ধে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হলেও পিছু হটেননি। এই নেতৃত্বের শক্তির কারণে সিংহ ছাড়া আর কোনও প্রাণীকে দেবী দুর্গার বাহন হিসেবে মানায় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here