এই মুহূর্তে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে গোটা বাংলা উত্তাল। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে আরও একটি খবর। ২০১২ সালে রাজধানী দিল্লির বুকে ঘটে গিয়েছিল নির্ভয়া গণধর্ষণ। সারা দেশ গর্জে উঠেছিল প্রতিবাদে। সেই সময় ভারতীয় আইন ব্যবস্থাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছিল। নারী সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেছিল ‘নির্ভয়া তহবিল’। ভারতের সব রাজ্যের জন্যই এই তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল টাকা। এতদিনে সেসব নিয়ে নাড়া ঘাঁটা চলছে। আর এখন জানা গেল এক দশক পরেও সেই তহবিলে বরাদ্দ টাকা খরচে পিছিয়ে রয়েছে বাংলা! ওই তহবিল থেকে কোন রাজ্য কত টাকা পেয়েছে আর তার থেকে কত খরচ হয়েছে, তা ২০১৯ সালে জানতে চেয়েছিলেন অন্যদের সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের দুই সাংসদ। তাঁরা হলেন তৃণমূলের মালা রায় এবং কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরী। উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যওয়াড়ি যে হিসাব সংসদে জমা দিয়েছিল, তাতে দেখা যায় সেই সময় পর্যন্ত বাংলার জন্য কেন্দ্র বরাদ্দ করেছিল ৭৫.৭০৮ কোটি টাকা। আর রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে পাঠানো খরচের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার মতো।

২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নির্ভয়া তহবিল তৈরি করেছিল এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে। তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন পি চিদম্বরম। প্রতি বছরই ওই তহবিল বাবদ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে সাধারণ বাজেটে। বাংলাও বাদ পড়েনি। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশের মোট আটটি শহর আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, হায়দরাবাদ,  লক্ষ্ণৌ, মুম্বইয় এবং কলকাতা নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কলকাতা-সহ সব শহরের জন্য এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র ওই খাতে ১,৪০৮.৩৩ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু দেশে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৮৩৬.৩৯ কোটি টাকা।

প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সরকার নারী সুরক্ষা খাতের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভয়া তহবিলের জন্য যতটা পরিমাণে টাকা বরাদ্দ করত, তা ক্রমশ কমতে থাকে। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে মোট বরাদ্দ ছিল ৩২১ কোটি টাকা। তার মধ্যে নির্ভয়া তহবিলের জন্য রাখা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে তা অনেকটাই বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জুলাই মাসের সাধারণ বাজেটে নারী সুরক্ষায় বরাদ্দ তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ বাড়িয়ে ১,১০৫ কোটি টাকা ধার্য করেন। নির্ভয়া তহবিলে বরাদ্দ দ্বিগুণ করে হয় ২০০ কোটি টাকা।

নির্ভয়া তহবিলের টাকায় কী কী খরচ করা হবে, তা বছরে বছরে বদলেছে। শহরে-গঞ্জের রাস্তায় আলো লাগানো থেকে মহিলাদের সুরক্ষায় শহরাঞ্চলে সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, মেয়েদের জন্য চলমান শৌচাগার নির্মাণ— এ সব যেমন রয়েছে, তেমনই এই তহবিলের টাকায় নির্যাতিতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা রয়েছে।

নির্ভয়া তহবিলের অর্থ কোন রাজ্যে কেমন খরচ হচ্ছে, তা নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১৯ সালে সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেখানকার রিপোর্টে দাবি করা হয়, দেশের মধ্যে নির্ভয়া তহবিলের টাকা খরচের নিরিখে পিছনের সারিতেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

নারী ও শিশুসুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা ২০২১ সালে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেই রিপোর্টে বলা হয়, টাকা শুধু যে পড়েই থাকছে তা নয়। এমন এমন খাতে খরচ হচ্ছে, যার সঙ্গে নারীকল্যাণের সরাসরি তেমন যোগ নেই। ফরেন্সিক ল্যাবের উন্নয়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা, সাইবার অপরাধ মোকাবিলার পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতে সেই টাকা ব্যবহৃত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here