হিন্দুশাস্ত্র মতে, বিন্ধ্যাচল পর্বতমালার রক্ষক অসুর বিন্ধ্য নিজের পাপ খণ্ডনের জন্য মহাদেবকে প্রসন্ন করেছিলেন।

তিনি মহেশ্বরকে প্রসন্ন করার অভিপ্রায়ে নকশার মাধ্যমে বালি ও পলির মিশ্রণে একটি শিবলিঙ্গ তৈরী করেন। মহাদেব প্রসন্ন হয়ে দুটি রূপে তার সামনে প্রকাশিত হয়েছিলেন। মনে করা হয় ঐ দুটি রূপই যথাক্রমে ওঙ্কারেশ্বর এবং অমরেশ্বর (বর্তমানে মমলেশ্বর) শিবলিঙ্গ। প্রাচীন জনশ্রুতি অনুসারে নদীগর্ভের পলি ঘনীভূত হয়ে দেবনাগরী ‘ॐ’ (ওঁ) এর আকার ধারণ করেছিল বলে দ্বীপটির নাম রাখা হয় ওঙ্কারেশ্বর। ভারতের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে ‘ওঙ্কারেশ্বর’ চতুর্থ জ্যোতির্লিঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়।

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে খাণ্ডোয়া জেলায় নর্মদা নদী ও তার উপনদী কাবেরীর তীরে অবস্থিত এই ওঙ্কারেশ্বর মন্দির। পাঁচতলা এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলে এই জ্যোতির্লিঙ্গ স্পর্শ করে পুজো দিতে পারেন। জানা যায়, ওঙ্কারেশ্বর দ্বীপটি মোট ২.৬ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত। এই দ্বীপটিকে মান্ধাতা দ্বীপও বলা হয়ে থাকে। দ্বীপটির নাম মান্ধাতা হওয়ার পিছনেও রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ইক্ষাকু বংশের রাজা মান্ধাতা ও তাঁর দুই সন্তান অম্বরীশ ও মুচুকুন্দ এখানেই ভগবান মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। সেই থেকেই ওই দ্বীপটির নাম হয়েছিল মান্ধাতা দ্বীপ।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে শুধুমাত্র এখানেই প্রতিরাতে বিশ্রামের জন্য আসেন স্বয়ং দেবাদিদেব। মনে করা হয় প্রতিদিন তিন লোকে ভ্রমণ করার পর মাতা পার্বতীকে নিয়ে তিনি এখানে আসেন এবং প্রতি রাতে দুজনে পাশা খেলেন। তাই প্রচলিত নিয়মানুযায়ী প্রতি রাতে শয়ন আরতীর পর এখানে পাশা বিছিয়ে দেওয়া হয়। গর্ভগৃহ বন্ধ করে দেওয়ার পর সেখানে কাক-পক্ষীও প্রবেশের জায়গা থাকে না। কিন্তু, পরের দিন সকালে গর্ভগৃহের দ্বার খুললে মনে হয় রাতে কেউ বসবাস করেছে এবং পাশা খেলেছে। উল্লেখ্য এই মন্দিরে মহাদেবের গোপন আরতীও হয়। শুধু মন্দিরের পুরোহিতই এই আরতীর সময়ে গর্ভগৃহে উপস্থিত থাকেন। তাই বলা হয়ে থাকে, শিবভক্তদের কাছে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের এক আলাদাই গুরুত্ব রয়েছে। শ্রাবণ মাসে এবং শিবরাত্রিতে এখানে অগণিত ভক্তপ্রাণ মানুষের ব্যাপক ভিড় হয় ও সারা বছর ধরেই বহু পুণ্যার্থীরা এখানে পুজো দিতে আসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here