দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত ভগবান তিরুপতি বালাজির মন্দির সহ ভারতে অনেক অলৌকিক এবং রহস্যময় মন্দির রয়েছে। তিরুপতি বালাজির রহস্যময় মন্দিরটি ভারত সহ সারা বিশ্বে বিখ্যাত। এই মন্দিরটি ভারতীয় স্থাপত্য ও কারুশিল্পের একটি চমৎকার নিদর্শন। তিরুপতি বালাজি মন্দির ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মন্দিরটি অন্ধ্র প্রদেশের চিত্তুর জেলার তিরুমালা পাহাড়ে অবস্থিত এবং এটি ভারতের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। তিরুপতি বালাজির আসল নাম শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী যিনি স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর তাঁর সহধর্মিণী পদ্মাবতীর সাথে তিরুমালায় বাস করেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ভক্তরা যারা আন্তরিক চিত্তে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন তাদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। তিরুপতি মন্দিরে তাদের চুল দান করার প্রথা রয়েছে। এই অতিপ্রাকৃত ও অলৌকিক মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক রহস্য। আসুন জেনে নিই তাদের সম্পর্কে।
কথিত আছে যে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর মূর্তিটিতে সত্যিকারের চুল রয়েছে। এই চুলে কখনও জট পড়েনা। বিশ্বাস করা হয় এখানে স্বয়ং ভগবানের বাস। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করলে দেখা যাবে যে গর্ভগৃহের কেন্দ্রে ভগবান শ্রী ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তি রয়েছে। কিন্তু গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে আপনি চমকে যাবেন কারণ বাইরে আসার পর দেখা যায় যে ঈশ্বরের মূর্তিটি ডানদিকে অবস্থিত। এখন এটা নিছক মায়া নাকি ঈশ্বরের অলৌকিক ঘটনা, তা আজ পর্যন্ত কেউ বের করতে পারেনি।
বিশ্বাস করা হয় যে দেবী লক্ষ্মীও ভগবানের এই রূপের অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীকে পুরুষ ও মহিলা উভয় পোশাকে সাজানোর প্রথা রয়েছে।
তিরুপতি বালা মন্দিরে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তিটি অতিপ্রাকৃত। এটি বিশেষ পাথর দিয়ে তৈরি। এই মূর্তিটি এতটাই জীবন্ত যে দেখে মনে হয় যেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এখানে বসে আছেন।
প্রভুর মূর্তিতে স্বদবিন্দু দেখা যায়। তাই মন্দিরে তাপমাত্রা কম রাখা হয়।
শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর মন্দির থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে গ্রামবাসী ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এই গ্রামের মানুষ খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং নিয়ম মেনে জীবন যাপন করে। মন্দিরে দেওয়া জিনিস যেমন ফুল, ফল, দই, ঘি, দুধ, মাখন ইত্যাদি এই গ্রাম থেকে আসে।
বৃহস্পতিবার ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে চন্দনের প্রলেপ প্রয়োগ করা হয়। তারপর প্রলেপ মুছে দিলে ভেঙ্কটেশ্বরের হৃদয়ে দেবী লক্ষ্মীর রূপ দেখা দেয়।
শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে একটি প্রদীপ সর্বদা জ্বালতে থাকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই প্রদীপে কখনওই তেল বা ঘি রাখা হয় না। কে কখন প্রথম প্রদীপ জ্বালালো তাও জানা যায়নি।
ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তিতে পাচাই কর্পূর লাগানো হয়। কথিত আছে যে কোনও পাথরে এই কর্পূর লাগালে কিছু সময়ের মধ্যে পাথরে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু ভগবান বালাজির মূর্তির ওপর পাচাই কর্পূরের কোনও প্রভাব নেই।
মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারের দরজায় ডানদিকে একটি লাঠি রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে শৈশবে এই লাঠি দিয়ে মারা হয়েছিল। যার কারণে তাঁর চিবুক আহত হয়েছিল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত শুক্রবারে ভেঙ্কটেশ্বরের চিবুকে চন্দনের প্রলেপ লাগানো হয়।
আপনি যদি ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তির বুকে কান পেতে শোনেন তবে আপনি সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাবেন। এটাও বলা হয় যে ভগবানের মূর্তি সবসময় আর্দ্র থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here