সামনেই কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই রকমারি বাজি পোড়ানো। ফুলঝুরি, তুবড়ি, রংমশাল, রকেট আরঅ কত কি! আর ভাল বাজি কেনার কথা বলতে একটাই নাম মাথায় আসে ‘বুড়িমা’। বর্তমানে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হলেও বুড়িমার চকলেট বোম বাজার রেখেছিল এক সময়। এখনও আমরা বাজি কিনতে গেলে বুড়িমার বাজিই চাই, তা সে চড়কি হোক বা অন্যকিছু। কিন্তু এই বুড়িমা টা কে, জানেন? কীভাবেই বা তিনি হলেন বাজির মার্কেটে অন্যতম ব্র্যান্ড?

এই বুড়িমা’ হলেন অন্নপূর্ণা দাস। তিনিই সেই নারী যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে থেকেও বাজির মতো মার্কেটে হয়ে উঠেছিলেন একটি ব্র্যান্ড। দেশভাগের সময় সব ছেড়ে ভারতে এসে রিফিউজি ক্যাম্পে ঠাঁই হয় অন্নপূর্ণার। গঙ্গারামপুরে থাকতে হারালেন স্বামীকে। তার পর শুরু হল তাঁর জীবন সংগ্রাম। সব্জি বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। রং থেকে প্রতিমা- সব কিছুরই ব্যবসা করেছেন অন্নপূর্ণা। এমনকি বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করে গড়ে তোলেন বিড়ি কারখানা। তত দিনে অবশ্য ঠিকানা বদলে এসেছেন বেলুড়ে। সেখানে এসে ন’শো টাকা দিয়ে দোকান কেনেন তিনি। ইচ্ছা জাগে বাজির ব্যবসা করার।

পরিকল্পনা মাফিক বাজি কিনে এনে দোকান সাজালেন। কিন্তু অনুমতিই না থাকায় দু’দিন পর সে দোকান ভেঙে দিল পুলিশ। কিন্তু তাতে দমে যাননি অন্নপূর্ণা। কিছু দিনের মধ্যেই জোগাড় করে ফেললেন অনুমতিপত্র। ফের শুরু করলেন ব্যবসা। তবে এবার আর কিনে না নিজেই বাজি তৈরি করার কথা ভাবলেন তিনি। কিন্তু বাজি তৈরি শেখাবে কে? সেই সময়েই অন্নপূর্ণার আলাপ হল বাঁকড়ার আকবর আলির সঙ্গে। হাতে ধরে তিনিই শেখালেন বাজি বানানোর কায়দা। কাকে বলে সোরা, ব্যাটরা। গন্ধক দেখতেই বা কী রকম? একটু একটু করে অন্নপূর্ণা শিখে ফেললেন সব। তারপরই সশব্দে এগিয়ে চলতে লাগল বুড়িমা’র বাজির বিজয়যাত্রা।

তারপর ডানকুনিতে কারখানার জন্য জমি কেনেন বুড়িমা। সেখানেই মাথা তুলে রমরমিয়ে চলল ব্যবসা। পরে অবশ্য সেই জমি দান করে দেওয়া হয়েছে পঞ্চাশটি দরিদ্র পরিবারকে তাদের বসবাসের জন্য। এমনই দরদী ছিলেন অন্নপূর্ণা, ওরফে সবার বুড়িমা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here