রামায়ণ অনুসারে ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র অকালে মা দুর্গার পুজো করেছিলেন রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে। শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজো বসন্তকালে হওয়াই নিয়ম। কিন্তু রাম অকালে দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে শরত্‍কালের দুর্গাপুজোকে অকাল বোধন বলা হয়। হিন্দু ধর্মে কোনও শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা অর্পণ করতে হয়। লঙ্কা জয়ের আগে এমনটাই করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই থেকে মহালয়ায় তর্পণ অনুষ্ঠানের প্রথা প্রচলিত।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর কর্ণ স্বর্গে গেলেন। তাঁকে সেখানে খাদ্য-পানীয়ের বদলে খেতে দেওয়া হল সোনা-রুপো-ধন-রত্ন। বিস্মিত কর্ণ প্রশ্ন করলেন, এ কী? খাদ্যের বদলে তাঁকে এসব কেন দেওয়া হচ্ছে? তখন তাঁকে জানানো হয়, মহাবীর কর্ণ আজীবন শুধু এইসবই দানধ্যান করেছেন, কখনও নিজের পূর্বপুরুষের কথা স্মরণ করেননি। তাঁদের আত্মার প্রতি খাদ্যপানীয় নিবেদন করেননি। তাই দানের পুণ্যফলে তিনি স্বর্গে আসতে পারলেও খাদ্যপানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হননি।

কর্ণ জানান, এতে তাঁর কোনও দোষ নেই, তাঁর জন্ম-মুহূর্তেই মা তাঁকে ত্যাগ করেছেন। অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী রাধা তাঁকে প্রতিপালন করেন। দুযোর্ধন তাঁকে আশ্রয় দেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরুর আগের দিন প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে কুন্তী এসে তাঁর জন্ম ও বংশ পরিচয় জানান। এরপরই যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তারপর মাত্র ষোলো-সতেরো দিন তিনি বেঁচে ছিলেন। পিতৃপুরুষকে জল দেবার সময় পেলেন কখন?

তখন কর্ণকে জানানো হয়, তাঁকে আবার মর্ত্যে ফিরতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জলদান করতে হবে। তাহলেই স্বর্গে এসে তিনি খাদ্যপানীয় পাবেন। তখন যমের বা ইন্দ্রের নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদ তিথিতে কর্ণ আবার মর্ত্যে আসেন। সেখানে ১৫ দিন থেকে পিতৃপুরুষকে জল দান করেন তিনি। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষ জলদান করে স্বর্গে ফিরে যান কর্ণ। আর এই বিশেষ পক্ষকালকেই শাস্ত্রে ‘পিতৃপক্ষ’ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল ‘মহালয়া’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here