ডোংরি এলাকায় বসবাসকারী একটি ৭ বছর বয়সী ছেলে, সে সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলা করে, মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসে। বাবা মুম্বাই পুলিশের একজন সৎ কনস্টেবল। কে জানত সেই ছেলেটিই একদিন বিশ্বের কাছে ত্রাসের অপর নামে পরিণত হবে। তাঁর নাম দাউদ ইব্রাহিম। একটা সময় ছিল যখন তাঁর নাম ধরে মুম্বইয়ের রাস্তায় কেউ ডাকতে পারত না। আকস্মিকভাবেই খবর পাওয়া গিয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দাউদ ইব্রাহিম। তাকে বিষ দেওয়া হয়েছে এমন খবরও মিলেছে।

দাউদ ইব্রাহিম ১৯৯৫ সালে মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরিতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা ভালবেসে ছেলের নাম রেখেছিলেন শেখ দাউদ ইব্রাহিম কাসকার। বাবা শেখ ইব্রাহিম আলি কাসকর মুম্বাই পুলিশে হাবিলদার ছিলেন। খুব নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল তাঁদের। কিন্তু দাউদ মধ্যবিত্ত জীবনে খুশি ছিল না। তাই বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিলাসবহুল জীবনযাপনের ইচ্ছা বেড়ে যায়। ফলে কিশোর দাউদ এলাকার বিপথগামী ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়াতে থাকে। বাবা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ছেলে সেসব উপদেশ নিতে নারাজ। ধীরে ধীরে দাউদ চুরি, ডাকাতি ও চোরাচালানে হাত পাকাতে থাকে। এই খবর কনস্টেবল শেখ ইব্রাহিমের কাছে পৌঁছলে তিনি ছেলেকে দাউদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর দাউদ যোগ দেন তৎকালীন বোম্বের কুখ্যাত গ্যাংস্টার করিম লালার দলে। সেখান থেকে পরে হলেন হাজি মাস্তানের সঙ্গী।

এর মধ্যে দাউদ ও হাজি মাস্তানের মতবিরোধ হয়। দাউদ হাজিকে টেক্কা দেওয়ার জন্য নতুন দল গঠন করে। ১৯৮০-এর দশকে করিম লালা এবং হাজি মাস্তানের গ্যাং মুম্বাইয়ে বিখ্যাত ছিল। কিন্তু দাউদ তাঁদের থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দাউদ তাঁদের দুজনকেই পেছনে ফেলে মুম্বইয়ের দুর্ধর্ষ ডন হয়ে ওঠে। এর পর বোম্বের পাঠান গ্যাং দাউদের ভাই শাব্বিরকে হত্যা করে। ভাইয়ের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে দাউদ পাঠান গ্যাংয়ের প্রত্যেক সদস্যকে হত্যা করার নির্দেশ জারি করে। প্রতিদিনের গণহত্যায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গোটা বোম্বে।

এ সময় দাউদ দুবাই পালিয়ে যায়। সেখানে তিনি যে বিলাসবহুল বাংলোতে থাকতেন সেটির নাম ছিল ‘হোয়াইট হাউজ’। বোম্বেতে দাউদের দল তখনও সক্রিয় ছিল। সেটি পরিচালনা করত ছোটা রাজন। বোম্বেতে টার্গেট কিলিং করত সে। বিবিধ সংবাদমাধ্যম দাউদের গ্যাংকে ডি কোম্পানি নামে অভিহিত করেছিল। সুপার কিলিং, অস্ত্র চোরাচালান ও মাদক চোরাচালান ছাড়াও ডি কোম্পানি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিল।

এরপর ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণে দাউদের নাম উঠে আসে। এই বিস্ফোরণে প্রায় ২৫০ জন নিহত হন। এর পর মুম্বাই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং একের পর এক এনকাউন্টার অপারেশন শুরু করে। শতাধিক এনকাউন্টারের পর মুম্বাই থেকে দাউদের প্রভাব বেশ খানিকটা কমে যায়।

১৯৯৩ সালের ঘটনার পর ভারত সরকার দাউদকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে। ২০০৩ সালে, ভারত-আমেরিকার সহায়তায় দাউদকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা করে। ফোর্বস ম্যাগাজিন- ২০১১ সালে, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড শীর্ষ-১০ অপরাধীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে এক নম্বরে ছিলেন দাউদ। দাউদ ২৬/১১ হামলার সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি করা হয়। দাউদ গত বহু বছর ধরে পাকিস্তানে রয়েছেন, কিন্তু বহু বছর ধরে তাঁর একটি ছবিও সামনে আসেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here