কেউটে সাপ: কেউটেকে ইংরাজিতে বলা হয় কোবরা। এই কোবরা শব্দটি আসলে একটি পর্তুগিজ শব্দ। এর অর্থ ফনা যুক্ত বিষধর সাপ। ভারতে গোখরো ও কেউটে সাপকে প্রধানত কোবরা শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় হঠাৎ দিল্লিতে কেউটে সাপের উত্পাত প্রবলভাবে বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশরা উৎপাত বন্ধ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে তারা একটি পরিকল্পনা করে। ব্রিটিশরা ঘোষণা করে, যে ব্যক্তি কোবরা সাপের চামড়া এনে দেবে তাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে। কিছুদিন পর সাহেবরা লক্ষ্য করে প্রচুর মানুষ মাঝে মধ্যেই কেউটের চামড়া নিয়ে এসে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সাপের সংখ্যা কমছে না কিছুতেই। অতঃপর খোঁজ নিয়ে ব্রিটিশরা জানতে পারে দিল্লিতে মানুষ কেউটে সাপকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে রীতিমতো। বাড়িতে কেউটে পালন করছে তারা। কিছুদিন পর বড় সাপ গুলোকে হত্যা করে ব্রিটিশদের কাছে নিয়ে আসছিল এবং বাচ্চা সাপগুলোকে প্রতিপালন করছিল। এভাবে সাপের সংখ্যা কমার তুলনায় বেড়ে গিয়েছিল। তখন ব্রিটিশরা এই পুরস্কার দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
যেই পুরস্কার বন্ধ হল তখন মানুষ বুঝল কেউটে প্রতিপালন আর তাদের লাভ দেবে না। তখন বাড়িতে পোষা সাপগুলোকে তারা ছেড়ে দেয়। এতে দিল্লিতে সাপের উত্পাত আরও বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে কোবরা এফেক্ট বলা হয়।
স্টিকি বম্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সালে জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণ করে। জার্মান সেনাবাহিনীর সামনে মিত্রশক্তি অর্থাৎ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনী ক্রমশ পিছু হটে ইংলিশ চ্যানেলের তীরে ফ্রান্সের ডানক্রিক বন্দরে এসে উপস্থিত হয়। এখান থেকে তিন লাখ মিত্রশক্তির সেনাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়। তিন লাখ সেনা ইংল্যান্ডে পৌঁছে যায় কিন্তু তাদের সমস্ত ভারি অস্ত্র ডানক্রিকেই থেকে যায় যা জার্মান সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। ইংল্যান্ড তখন জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নতুন অস্ত্র তৈরি করতে থাকে যার একটি হল স্টিকি বোম্ব যার আসল নাম ছিল গ্রেনেড, হ্যান্ড, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক নং ৭৪. জার্মান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার জন্য এই বোম্ব তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা।
কিন্তু ভাবা হয় এক, আর ফল হয় আরেক। স্টিকি বম্ব তৈরির সময় ভাবা হয়েছিল জার্মান ট্যাঙ্কের উপর একজন ব্রিটিশ সেনা লুকিয়ে এই বম্ব আটকে দেবে। কয়েক মুহূর্ত পর হবে বম্ব বিস্ফোরণ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হল উল্টো যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, সে তো আর ঝাঁ চকচকে নয়। জার্মান ট্যাঙ্কের মধ্যে অনেক ধুলো, ময়লা থাকায় বম্ব ট্যাঙ্কে আটকানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে দেখা যেত, ট্যাঙ্ক এগিয়ে গিয়েছে, স্টিকি বম্ব খুলে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। এছাড়া এই বম্বের থেকে গড়িয়ে পড়া তরল আঠা অনেক সময় সেনা সদস্যদের পোশাকে লেগে যেত। ফলে সেই সেনাসহ বম্বটি বিস্ফারিত হত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। ফলে একসময় বাধ্য হয়ে স্টিকি বম্ব বন্ধ করে দেয় মিত্রশক্তি।
ডেডলি প্যারেড: ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে অংশ নেওয়া আমেরিকান সেনারা সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ দেশে ফেরার প্রস্ততি নেয়। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া প্রদেশের সরকার ঠিক করে সেনাবাহিনীর বিজয়কে সম্মান জানাতে এক সুদৃশ্য প্যারেডের আয়োজন করা হবে। তাতে শুধু সেনারা নয়, অংশ নেবে সাধারণ মানুষও। সেই অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়ার ব্রড স্ট্রিটে প্রায় দুই লাখ মানুষ প্যারেডে অংশ নেয়। কিন্তু এর বাহাত্তর ঘণ্টা পরে ফিলাডেলফিয়ার সমস্ত হাসপাতাল রোগীতে ভরে যায়। আসলে এই সমস্ত মানুষ ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯১৮ সাল থেকেই আমেরিকাতে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল যাতে বহু মানুষের মৃত্যুও হয়। ফিলাডেলফিয়া সরকার এই রোগকে ততটা গুরুত্ব না দিয়েই বিশাল প্যারেডের আয়োজন করেছিল, ফলে সংক্রমিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। প্যারেড হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফিলাডেলফিয়াতে ৪,৫০০ মানুষের মৃত্যু হয় এই স্প্যানিশ ফ্লু’তে।
শু ফিটিং এক্স রে মেশিন: ১৯২০ সালে ইউরোপ ও আমেরিকার জুতোর দোকানে এক ধরনের মেশিনের ব্যবহার শুরু হত, যাতে জুতো পায়ের মাপের কিনা তা সঠিক ভাবে বোঝা যায়। চার ফুট লম্বা এই মেশিনে এক্স-রে ব্যবহার করা হত পায়ের মাপ বোঝার জন্য। কোনও ব্যক্তি এই মেশিনে যখন জুতো পরে পা দিত তখন এক্স-রে এর মাধ্যমে বোঝা যেত পায়ের হাড় জুতোয় সঠিকভাবে মানানসই হয়েছে কী না। সাধারণত চিকিত্সার সময় এক্স-রে ব্যবহার করা হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য। মাত্রাতিরিক্ত এক্স-রে এর ব্যবহার মানুষের ত্বক ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে। কিন্তু ১৯২০ এর দশক থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত আমেরিকা ও ইউরোপের জুতোর দোকানে একজন মানুষ বহুক্ষণ ধরে এক্স-রে এর মাধ্যমে জুতোর মাপ দেখতো। ফলে জুতোর দোকানে থাকা কর্মচারীরাও এক্স-রে এর ক্ষতিকারক প্রভাবের কবলে পড়ত। ধীরে ধীরে মানুষ এক্স-রে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে থাকলে এই মেশিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিমি মাছের বিস্ফোরণ: ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার ফ্লোরেন্সের উপকূলে একটি বিশাল তিমি মাছের মৃতদেহ ভেসে আসে। এই তিমির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫ ফুট এবং ওজন ছিল আট টন। এই বিশাল তিমি মাছের মৃতদেহকে প্রথমে ওখানেই ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ফ্লোরেন্সের সরকার। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তিমি মাছের মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া হবে। এত বিশাল আকৃতির তিমি মাছকে সরাসরি মাটিতে পুঁতে দিতে অনেক বড় গর্ত করতে হত। যার কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ডিনামাইটের মাধ্যমে তিমি মাছটিকে বিস্ফোরিত করে কয়েক টুকরো করা হবে।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল ৩:৪৫ নাগাদ কুড়িটি ডিনামাইট বিস্ফোরণ করানো হয় তিমি মাছের শরীরে। এই স্থান থেকে পাঁচশো মিটার দূরে মানুষজন এই ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছিল। কিন্তু বিস্ফোরনের পরও তিমি মাছের অর্ধেকের বেশী শরীর অক্ষতই ছিল। এরপর ফ্লোরেন্স সরকার সেখানেই বাকি মাছটিকে পুঁতে দেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় ভবিষ্যতে এরকম হলে আর কখনও বম্ব ব্যবহার করা হবে না।
Home অন্যান্য খবর