কলকাতায় এমন একটি কালী মন্দির রয়েছে, যা অন্যান্য কালী মন্দিরের মতো হলেও সর্বতোভাবে আলাদা। যা এই মন্দিরটিকে অনন্য করে তুলেছে তা হল এখানে দেওয়া নৈবেদ্য এবং মন্দিরে আসা বেশিরভাগ ভক্ত। এই মন্দিরে নুডুলস, চপস্টিক, ভাত এবং শাকসবজি দিয়ে তৈরি খাবার মাকে নিবেদন করা হয়। এটাই দেবীর বিশেষ ভোগ। আর এখানে আসা ভক্তদের বেশিরভাগই চিনা।
ট্যাংরা এলাকা যাকে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বলা হয় সেটাই ভারতের চায়না টাউন। এখানে ভারতীয় ও চিনা ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখা যায়। এখানে অবস্থিত কালী মন্দিরকে ‘চিনা কালী মন্দির’ বলা হয়। মন্দিরটি শুধুমাত্র দুটি সংস্কৃতিকে একত্রিত করে না বরং পারস্পরিক সম্প্রীতিও বাড়ায়। ট্যাংরা এলাকায় বসবাসকারী চিনা ও হিন্দু প্রতিবেশীরা একসঙ্গে কোনও উৎসব উদযাপন করার ঘটনা খুব বিরল। কিন্তু কালী পূজার দিন, চিনারাও তাদের ভারতীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কালী পূজায় অংশ নিতে প্রয়োজনে অফিস থেকে ছুটি নিয়েও মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হয়।
৫৫ বছর বয়সী চিনা নাগরিক অ্যাসন চেন এই মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন। চেন জানান, কালী মন্দিরে নিত্য পূজার দায়িত্ব মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ফুল আনার দায়িত্ব দেওয়া হলে, কেউ প্রতিদিন মিষ্টি-ভোগ নিয়ে আসেন। কিছু লোক পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখেন। প্রতিদিন একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ মায়ের আরাধনা করেন।
চেন জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬০ বছরের পুরনো। গাছের নীচে দুটি কালো পাথর ছিল, যেগুলিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পূজা করতেন। তাদের দেখে চিনা বাসিন্দারাও পুজো করতে শুরু করেন। শোনা যায় একবার এক চিনা দম্পতির ১০ বছরের ছেলে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরাও হাত তুলে নেন। এমতাবস্থায় দম্পতি সেই ছেলেকে এই গাছের নিচে শুয়ে রেখে সন্তানের সুস্থতার জন্য দিন রাত এক করে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। এরপর কালীমাতার অলৌকিকতায় সুস্থ হয়ে ওঠে শিশুটি। সেই থেকে চিনা সম্প্রদায়ের মানুষেরা মায়ের প্রতি আস্থা রাখেন এবং মন্দিরে পুজো শুরু করেন।
ট্যাংরায় বসবাসকারী প্রতিটি চিনা পরিবার মাতার মন্দিরের জন্য অর্থ দান করেন। দীপাবলিতে চিনা সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০০ মানুষ এখানে পুজোর জন্য জড়ো হয়। মন্দিরে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি অনুযায়ী পু্জো করা হয়। কালী পুজোর দিন এখানে যেমন মোমবাতি জ্বালানো হয়, তেমনই চাইনিজ ধূপ এবং উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই কারণেই এই মন্দিরের গন্ধ অন্যান্য কালী মন্দির থেকে আলাদা।
এই মন্দিরে অনুসৃত আরেকটি অনন্য রীতি হল অশুভ শক্তির প্রভাব এড়াতে হাতে তৈরি কাগজ পোড়ানো। এমনকি মাতৃদেবীর পুজোর পদ্ধতিও সম্পূর্ণ চিনা।