কালীঘাটের কথা কে না জানে। প্রাচীনকালে বহু মান্যষ তীর্থ দর্শনে কালীঘাটে আসতেন। এটি আদপে এক শক্তিপীঠ। সতীর দেহত্যাগের পর তাঁর ডান পায়ের চারটি (মতান্তরে একটি) আঙুল এই তীর্থে পতিত হয়েছিল। পুরাণ মতে কালীঘাট বারাণসী তুল্য । এই তীর্থের পীঠদেবী দক্ষিণাকালী এবং ভৈরব বা পীঠরক্ষক দেবতা নকুলেশ্বর রূপে পূজিত হন।

দেবী কালীঘাটে ভৈরবী , বগলা , মাতঙ্গী , বিদ্যা , কমলা , ব্রাহ্মী , মহেশ্বরী , চণ্ডী প্রভৃতি রূপে পূজিতা । দীপান্বিতা অমাবস্যাতে দেবীকে মহালক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়।

বলা হয়, ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে ভুবনেশ্বর ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক দেবী কালীর পুজো করতেন। তিনি তাঁর জামাই আগমাচার্য ভবানীদাস চক্রবর্তীকে কালীঘাটের মন্দির হস্তান্তরিত করেছিলেন। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যর কাকা রাজা বসন্ত রায় এখানে মন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন। পরে দেবীর মন্দির জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ১৮০৯ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা এখানে মন্দির তৈরি করে দেন।

দেবীর মন্দিরের সামনের নাটমন্দির তৈরি করেছিলেন আন্দুলের মহারাজ কাশীনাথ রায়। পঞ্জাবের তারা সিং এসে আবার গঠন করেছিলেন কালীঘাটের দেবী কালীর ভৈরব নকুলেশ্বরের মন্দির। এছাড়াও অন্যান্য জমিদার এবং ব্যবসায়ীরাও এই মন্দিরের চারপাশ তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। বিহারের মুঙ্গেরের ব্যবসায়ী গোবর্ধন দাস যেমন বানিয়ে দিয়েছিলেন কালীঘাট মন্দিরের আশপাশের রাস্তা।

মন্দিরের পূর্বদিকে রয়েছে কুণ্ডপুকুর। মনে করা হয়, সেই পুকুর থেকেই উঠে এসেছিল কালীঘাটের দেবী কালীর মূর্তি। রানি রাসমণি প্রায়ই কালীঘাটের এই মন্দিরে যাতায়াত করতেন।

এখানে দেবীর মুখমণ্ডল একটি কষ্টিপাথরের শিলাখণ্ড। পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্র চন্দ্রসিং বাহাদুর দেবীর প্রতিদিনের ভোগের খরচ বহন করতেন। নেপালের জং বাহাদুর দেবীকে রুপোর ছাতা দিয়েছিলেন।

প্রথমে দেবীর ছিল রুপোর হাত। পরে, বানানো হয় সোনার হাত। তাঁর পদতলে রুপোর মহাদেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here