দেবী সরস্বতী পুজো হয় শুদ্ধাচারে। শ্বেত পদ্মাসনা দেবীর আরাধনা করে বিদ্যালাভ, জ্ঞান লাভ করে মানবকুল। যাই হোক, সরস্বতী পুজোতে কেউ কখনও বলি দেখেছেন? এই যেমন দুর্গা পুজো, কালী পুজোয় বলি হয় তেমন বলির কথাই বলা হচ্ছে। সরস্বতীর আরাধনা করতে গেলেও কিন্তু বলি দেওয়া হয়। তার পেছনে রয়েছে এক পৌরানিক গল্প।

হিন্দু শাস্ত্রে সরস্বতী পুজোতে ছাগ শিশু বা মেষ শিশু বলি দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। শতপথ ব্রাহ্মণের একটি আখ্যান অনুযায়ী, একবার ইন্দ্রের সঙ্গে বিশ্বরূপের প্রচন্ড ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর ইন্দ্র রেগে গিয়ে বিশ্বরূপকে নিহত করেন। বিশ্বরূপের নিহত হবার খবর পেলেন ত্বষ্টা। বিশ্বরূপের পিতা ত্বষ্টা ইন্দ্রের উপর খুব রেগে যান।

ত্বষ্টা তখন বুদ্ধি করে এক কৌশল বের করলেন। তিনি জাদুবলে সোমরস আনালেন। ভাবলেন সেই সোমরস খাইয়েই ইন্দ্রকে জব্দ করবেন তিনি। এই সুরা পানে দেবরাজ তাঁর শক্তি হারাবেন। ইন্দ্র সুরাশক্ত। তিনি তো সোমরসের নাম শুনেই খুশি মনে পান করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং পান করলেনও।

সোমরস দেবরাজের শরীরে প্রবেশ করতেই শুরু হল ক্রিয়া। শরীরের অভ্যন্তরীন অংশ জ্বলে পুড়ে যেতে থাকল ইন্দ্রর। ধীরে ধীরে একটি একটি করে অঙ্গ খসে পড়তে লাগল তাঁর। একেবারে শক্তিহীন তখন ইন্দ্র। যেটুকু শক্তি ছিল তাও কেড়ে নিল ইন্দ্রের চিরকালীন শত্রু অসুর নমুচি। এদিকে স্বর্গের দেবতারা তাঁদের রাজার এহেন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। বহু আলাপ আলোচনার পর দেবতারা ঘোষণা করলেন যিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন তাঁকে পশুবলি প্রদান করা হবে।

এরপরই দেবতারা শরণাপন্ন হন অশ্বিণীকুমারদ্বয় ও দেবী সরস্বতীর। ইন্দ্রকে রোগ মুক্ত করার জন্য সৌত্রামণী যজ্ঞ করেছিলেন বীনাপাণি। এই যজ্ঞের পর পুনরায় বল ফিরে পেলেন স্বর্গরাজ। যজ্ঞে মেষ বলি দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই সরস্বতী পুজোতে বলির নিয়ম প্রচলিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here