ইউরিক অ্যাসিডের ফলে সাধের মুসুর ডাল তো বটেই, রবিবারের দুপুরে জমিয়ে পাঁঠার মাংস খাওয়াও বাদ হয়ের যায় জীবন থেকে। ওষুধ খেতেই হয় নিয়মমতো, না খেলেই অনিবার্য গাঁটের ব্যথা। বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন। গাঁটের ব্যথায় শয্যাশায়ী হয়ে দিনও কাটাচ্ছেন অনেকে। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনিও বিকল হতে শুরু করবে।

মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনও কখনও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালিতে জমা হতে থাকে। তখন প্রস্রাবের সমস্যা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা শুরু হয়। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। শরীরে এই রোগ ধরা পড়লে খেয়াল রাখতে হবে, এমন খাবার খাওয়া চলবে না, যাতে ওজন বেড়ে যায়।, সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জল তো খেতেই হয়। আর নিয়ম করে ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। এই ব্যাপারে অনেকেই বলেন, একবার ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়া মানে কি আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যদি নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা করা হয়, তা হলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। আর সেই সঙ্গেই খেতে হবে কিছু ‘ডিটক্স’ পানীয়। আয়ুর্বেদে এমন কিছু ডিটক্স পানীয়ের নিদান আছে, যা নিয়মমতো খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারবে না।

কোন কোন ভেষজ পানীয় ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারে?

গুলঞ্চের চা

বাড়িতে গুলঞ্চ গাছ থাকলে তার পাতা এবং কিছু ডাল কেটে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরের দিন সকালে এগুলি গুঁড়িয়ে নিন। এক গ্লাস মতো জলে এক থেকে দু’চামচ গুলঞ্চের গুঁড়ো মিশিয়ে ফুটতে দিন ৫-৭ মিনিট। জলের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন।

ত্রিফলা চা

ত্রিফলা হল আমলকি, হরিতকি, এবং বহেরা এই তিনটি ফলের মিশ্রণ। ত্রিফলা খেলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ত্রিফলার আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পেটের সমস্যা দূর করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন পদার্থ বার করে দিতেও আমলকি বেশ উপকারী। অন্য দিকে, হরিতকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বহেরা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ত্রিফলা চূর্ণ করে নিয়ে, এক চামচ মতো ত্রিফলার গুঁড়ো এক কাপ জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে খালি পেটে সেই জল খেতে পারেন। না হলে এক কাপ জলে এক চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো মিশিয়ে তা ৫ মিনিট ধরে ফোটান। তার পর ছেঁকে সেই জল খেতে হবে। রাতে শোয়ার আগে এই জল খেলে ঘুম ভাল হবে এবং শরীরে টক্সিন জমতে পারবে না।

নিম-তুলসীর রস

নিম ও তুলসী দুইই শরীরকে ‘ডিটক্স’ করতে পারে। শরীরে প্রদাহ কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং লিভার ও কিডনির স্বাস্থ্যও ভাল রাখে।

এক মুঠো নিমপাতা ও তুলসীপাতা ভাল করে ধুয়ে এক কাপ জলে ৫-৭ মিনিট ধরে ফোটান। এর পর ঠান্ডা করে ছেঁকে সেই জল খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমবে।

ধনে ভেজানো জল

ধনে ভেজানো জল খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়, ওজন কমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কিডনির সমস্যা সারে।

এক চা চামচ ধনের বীজ এক গ্লাস জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই জল ছেঁকে খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমবে। ধনে ভেজানো জল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রিত হয়। ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here