সালটা তখন ১৯১৪। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু তখনও হয়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন শিবিরের দেশগুলির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছিল। যার রেশ এসে পড়েছিল তৎকালীন দক্ষিণ পূর্ণ এশিয়ার ইংরেজ শাসনে থাকা দেশগুলিতেও।

সেই সময়ে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী গুরদিত সিং সান্ধু কানাডার অভিবাসন নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, সেই সময়ে প্রচুর ভারতীয়কে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

তিনি কলকাতা থেকে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের উদ্দেশ্য কোমাগাতা মারু নামে একটি জাপানি জাহাজে আনুমানিক ৩৭৬ জন যাত্রীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পথে বিভিন্ন দেশে থেমে অবশেষে কানাডায় পৌঁছান তাঁরা। কিন্তু সেখানে জাহাজ যেতেই শুরু হয় বিপত্তি। কানাডার তৎকালীন অভিবাসন দফতর কিছুতেই জাহাজের যাত্রীদের কানাডায় প্রবেশ করতে দেননি।

তাঁদের আশঙ্কা, এই জাহাজে ভারত থেকে পলাতক বেশ কিছু বিপ্লবীও আত্মগোপন করে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন গুরদিত সিং সান্ধু। তাঁর সঙ্গে পরে আরও অনেকে প্রতিবাদে যোগ দেন। কিন্তু শেষে কার্যত খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাঁদের।

ফেরার পথে কলকাতা বন্দরে আসে কোমাগাত মারু জাহাজটি। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ প্রত্যেক যাত্রীকে কড়া পাহারায় রাখে। কারণ, তাঁদের আইনভঙ্গকারী হিসাবে দেখা হয়।

এমনকী তৎকালীন ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক কর্মী হিসাবেও দেখা হয় তাঁদের। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই জাহাজের যাত্রীরা। তখন ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে বজবজে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় তাঁদের। গুলি চালায় পুলিশ।

সরকারি সূত্র মোতাবেক, ২৬ জনের মৃত্যু হয়। প্রচুর যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। অনেকে পালিয়ে যান। অনেক জায়গায় বলা হয়েছে, গুরদিত সিং সান্ধু তখন গ্রেফতার হয়েছিলেন। আবার অনেক জায়গায় রয়েছে, বেশ কয়েক বছর পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

সেই ঘটনার শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৫২ সালে কোমাগাটা মারু শহিদদের জন্য একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।

২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কোমাগাটা মারুর ঘটনার শতবার্ষিকী উপলক্ষে দুটি বিশেষ মুদ্রা জারি করেছিল। অন্যদিকে, ১৯৮৯ সালে ভ্যাঙ্কুভারের শিখ গুরুদ্বারে কোমাগাটা মারুর জাহাজ প্রস্থানের ৭৫তম বার্ষিকী স্মরণে একটি ফলক স্থাপন করা হয়েছিল।

২০০৮ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার আইনসভা সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করে বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চায়। ২০১৬ সালের ১৮ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমা চান বিষয়টি নিয়ে।

২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বজবজ স্টেশনের নাম পাল্টে রাখে কোমাগাতা মারু বজবজ স্টেশন। তারপর থেকে এটি এই নামেই রয়েছে। কোমাগাতা মারুর নিহতদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here