হার্ট অ্যাটাক আজ মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যান অনেকে। এ ধরনের প্রায়ই ঘটনা ঘটছে। এমনকি তরুণ প্রজন্মও এমন হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় ভোরের দিকে খাট থেকে মাটিতে পা রাখা মাত্রই ঘটে বিপদ। কিন্তু কীভাবে হঠাৎ করে এই নির্দিষ্ট সময়কালে মানুষ মারা যায়?
মনে রাখবেন, রাতে ঘুমোনোর ফলে দীর্ঘক্ষণ মানুষের শরীরে সম্পূর্ণ অন্যভাবে ব্যস্ত থাকে। অক্সিজেন, রক্তের প্রবাহে পরিবর্তন আসে। যখন আমাদের হৃদপিণ্ডে বা হার্টে রক্তচলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। আমাদের শরীরের যে ধমনি যার মধ্য দিয়ে রক্ত হৃদপিণ্ডে পৌছে সেই ধমনি যদি রক্ত চলাচলে বাধা প্রাপ্ত হয় তখন হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট তখনই হয় যখন হার্ট রক্ত সঞ্চালন করা বন্ধ করে দেয় ৷ আচমকা কারোর হার্ট যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় ও সেই ব্যক্তি নিঃশ্বাস নিতে না পারে তাহলে তা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে হয়৷ এরকম পরিস্থিতি দেখা দিলে আক্রান্তকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া উচিত। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ কী ? কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সবচেয়ে বড় কারণ হল অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন বা Ventricular fibrillation ৷ এই পরিস্থিতি তখনই হয় যখন রক্তে অধিক মাত্রায় ফাইব্রিনোজেন পাওয়া যায় ৷ এর জেরে হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চার করা বন্ধ হয়ে যায়৷
বাথরুমে হার্ট অ্যাটাকের কারণ কী?
সকালে যখন আমরা টয়লেটে যাই, অনেক সময় আমরা পেট পুরোপুরি পরিষ্কার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করি। আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলো ঠিক মতো মলত্যাগ না হওয়া। খাবারে আশ যুক্ত খাবার কমে গেলে অথবা জলণ কমে খেলে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। মেডিকেল এর ভাষায় একে বলে ভালসালভা মানেউবের ( Valsalva Maneuver)। ভারতীয় টয়লেট ব্যবহার করার সময়, লোকেরা আরও চাপ প্রয়োগ করছে বলে মনে হয়। এই চাপটি আমাদের হৃদয়ের ধমনীতে আরও চাপ সৃষ্টি করে। এটি হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে।
বাথরুমেই অ্যাটাক হয় কেন?
অনেকেই আছে যারা উচ্চরক্ত চাপে ভুগছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে স্নানের সময় জলের তাপমাত্রা মেপে স্নান করা উচিত। স্নানের সময় হঠাৎ ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে এলে সিম্পেথেটিক টোন বেড়ে যায় ফলে স্কিন বা ত্বকে এর তাপমাত্রা কমে যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
আমাদের দেশের বয়স্ক মানুষ জন সচরাচর সকালে উঠেই স্নান সেরে নেয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলে থাকেন, যাঁদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাঁদের কুসুম জলে স্নান সারা উচিত। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই বিছানা থেকে তাড়াহুড়ো করে বাথরুমে যাওয়া যাবে না। ধীরে সুস্থে হাঁটবেন। বিছানার পাশে সবসময় জলের গ্লাস রাখুন। বিছানা থেকে উঠেই জল পান করুন। দেখবেন, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
কেমন করে স্নান করবেন
১ প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে উপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে।
২ তারপর মুখে জল দিতে হবে।
৩ সবার শেষে মাথায় জল ঢালা উচিত।
৪ এই পদ্ধতি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং মাইগ্রেন আছে তাদের অবশ্যই পালন করা উচিত।
৫ আপনি যদি স্নানের সময় দীর্ঘক্ষণ বাথটাব থাকেন তবে এটি আপনার ধমনীতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দিন বাথটাবে বসে থাকবেন না।
আপনি যদি ভারতীয় টয়লেট ব্যবহার করেন, তবে একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। এইভাবে আপনি হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এড়াতে পারবেন।
বাথরুমে স্নানের সময় জলের তাপমাত্রার দিকে লক্ষ্য করুন। প্রথমে পায়ের তলা ভিজিয়ে রাখুন। এর পরে মাথায় হালকা জল ঢালুন।
আপনার পেট পরিষ্কার করার জন্য খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না এবং তাড়াহুড়ো করবেন না।
ঘুম থেকে উঠে ৩০ সেকেন্ড বিছানার মধ্যে বসে থাকুন। এরপর ৩০ সেকেন্ড খাটে বসে মাটিতে পা দিয়ে বসে থাকুন। এতে শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও থাকবে না।