ভারতের জায়গায় জায়গায় ভৌতিক কাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে। সিমলার টানেল থেকে শুরু করে রাজস্থানের ভানগর দুর্গ, মুম্বইয়ের মুকেশ মিল থেকে কার্শিয়াঙের ডাউ হিল- সব জায়গাতেই বুনন হয়েছে একের পর এক ভৌতিক গপ্প। কলকাতাতেও রয়েছে এমন বেশ কিছু স্থান যেখানে রাত-বিরেতে দেখা মেলে তেঁনাদের। ভূত চতুর্দশীতে তাই আজ গল্প করা যাক কলকাতার বেশ কিছু ভৌতিক স্থান নিয়ে।
রাইটার্স বিল্ডিং
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল প্রধান দফতর রাইটার্স বিল্ডিং কলকাতার অন্যতম সেরা ভুতুরে স্থান। এইখানেই হয়েছিল ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধ। ১৯৩০’র ৮ ডিসেম্বর অলিন্দ যুদ্ধে নৃশংস জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেছিলেন বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত। অনেকেই বলেন রাইটার্সে আজও সিম্পসনের আত্মাকে দেখা যায়। শোনা যায় তাঁর ভারী বুটের শব্দ, চিৎকার। রাইটার্সে কর্মরত বহু কর্মী রাতে ডিউটি করতে রাজি হন না। রাইটার্সের ছ’তলায় হত্যা করা হয়েছিল সিম্পসনকে, ওই ফ্লোরে আজও কেউ যেতে সচরাচর সাহস করেন না।
হেস্টিংস হাউজ
আলিপুরের অবস্থিত হেস্টিং হাউজ তৈরি করিয়েছিলেন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস। বর্তমানে সেটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ। এখানে কলেজ হোস্টেলও রয়েছে। হোস্টেলের বহু ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছেন সাহেবী পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে তাঁরা মাঝরাতে প্রায়ই ঘোড়ায় চড়ে আসতে দেখেছেন। ওই ব্যক্তি কিছুর খোঁজে আসেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বাস সাহেবি কেতাদুরস্ত ওই ব্যক্তিই আসলে ওয়ারেন হেস্টিংস। আবার কেউ কেউ বলেন, মাঝেমধ্যে একটি বাচ্চা ছেলেকেও দেখা যায়, মাঝরাতে শোনা যায় ফুটবল খেলার শব্দ।
জাতীয় গ্রন্থাগার
জাতীয় গ্রন্থাগারের নিরাপত্তা রক্ষীরা জানিয়েছেন তাঁরা অনেক রাতে এক নারীর চিৎকার শুনতে পান। সেই নারী সম্ভবত লর্ড মেটকাফের স্ত্রী। কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই নারীকণ্ঠ নির্দেশ দেয় গ্রন্থাগার চত্বর পরিষ্কার রাখার। ধরুন আপনি কোনও একটি বই নিয়ে যথাস্থানে রাখলেন না, আপনি কানের কাছে ঘাড়ের পাশে অনুভব করতে পারবেন সেই নারীর নিঃশ্বাস। এও শোনা যায় ২০১০ সালে যখন গ্রন্থাগারের পুনর্নির্মাণ হচ্ছিল তখন ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। তাঁদের আত্মা আজও রয়ে গিয়েছে ওই চত্বরে।
রবীন্দ্র সরোবর
রবীন্দ্র সরোবরের শেষ মেট্রোর নিত্যযাত্রীরা অনেকেই বলেছেন তাঁরা ছায়া দেখতে পেয়েছেন, এমন অনেক শব্দ শুনেছেন যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। বলা হয়, মেট্রো স্টেশনে যারা আত্মঘাতী হয়েছিলেন তাঁদের আত্মা আজও ঘুরে বেড়ায় রবীন্দ্র সরোবরে।
সাউথ পার্ক্সট্রিট সেমেট্রি
সাউথ পার্ক্সট্রিট সেমেট্রিতে অধিকাংশই ব্রিটিশ সেনাদের সমাধিস্থল। তিলোত্তমার বুকের অনন্য ভ্রমণস্থান এটি। এখানেও অনেকে অশরীরী শক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছেন। তবে ক্ষতিসাধন সেভাবে কারওরই হয়নি। শুধু একবার এক দল যুবক সেমেট্রিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন একটি ছায়া দেখতে পেয়ে সেটি ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর মৃত্যু হয় হাঁফানিতে। অথচ তাঁর হাঁফানির অসুখ ছিলই না।
উইপ্রো
ভারতের মধ্যে উইপ্রোই বোধহয় একমাত্র অফিস যেখানে কোম্পানি থেকেই কর্মীদের বলে দেওয়া হয় অফিসের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে দূরে থাকতে। বিশেষত, টাওয়ার থ্রি’র চার তলা। স্থানীয়দের মতে আজ যেখানে উইপ্রোর অফিস আগে সেখানেই ছিল কবরস্থান। সেখানে একসময় যথেচ্ছভাবে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটত। উইপ্রো কর্মীরা অনেকসময় শৌচালয় বা বিল্ডিংয়ে যাতায়াতের পথে এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন যা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
রয়্যাল টার্ফ ক্লাব
রয়্যাল টার্ফ ক্লাবের অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন জর্জ উইলিয়াম ও তাঁর প্রিয় ঘোড়া পার্লের নাম। তিনের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জর্জ পাঁচটি সাদা ঘোড়া কেনেন। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল পার্ল। পার্ল ছিল জর্জের তুরুপের তাস। প্রায় প্রতিটি রেসেই সে জয়ী হত বলে ঘোড়াটির নাম হয়ে গিয়েছিল ‘দ্য কুইন অফ দ্য ট্র্যাকস’। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ।পার্লের তেজ কমতে থাকে। কলকাতা ডার্বির একটি শোয়ে শেষবারের মতো দৌড়ায় পার্ল। সেই দৌড়ে আর জিততে পারেনি সাদা ঘোড়াটি। পার্লের ওপর বাজি ধরে হেরে যান জর্জও। পরদিন পার্লকে মৃত অবস্থায় কলকাতারই রেললাইনের ধারে পাওয়া যায়। সারা শরীর তার গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত ছিল। আজও নাকি বহু মানুষ একটি সাদা ঘোড়াকে মাঝরাতে, বিশেষত শনিবার রয়্যাল টার্ফ ক্লাবের মাঠে দেখতে পান।
হাওড়া ব্রিজ
হাওড়া ব্রিজ নিঃসন্দেহে কলকাতার অন্যতম এক দ্রষ্টব্য স্থান হাওড়া ব্রিজ। ব্রিজের নীচ দিয়ে আপন গতিতে বয়ে চলেছে পতিত পাবণী গঙ্গে। গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সূর্যোদয়ের আগে এই ঘাটে বহু কুস্তীগীর আসেন শরীরচর্চার জন্য। তাঁরা অনেকেই বলেছেন মধ্যরাতে গঙ্গার ঘাটে এসে শরীরচর্চা করার সময় তাঁরা দেখেছেন গঙ্গার জলের ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে কেউ কেউ সাহায্য চাইছেন। যারা সাহায্যর জন্য গিয়েছেন তাঁরা আর ফিরে আসেননি। আবার কেউ কেউ সাদা শাড়ি পরিহিত এক মহিলাকে কান্নাকাটিও করতে দেখেছেন, এমনকি নাম ধরে ডাকতেও শুনেছেন।
পুতুলবাড়ি
কলকাতার আরও একটি ভৌতিক স্থান পুতুলবাড়ি। এই বাড়ির একটি অংশে রয়েছে গেঞ্জির কারখানা। পুতুলবাড়ির নাম শুনেই বোঝা যায় বাড়িতে পুতুল রয়েছে। তবে পুতুলের পাশাপাশি বিভিন্ন অলৌকিক কার্যকলাপের জন্যও এই স্থান পরিচিত। শোনা যায়, একসময় বাবু কালচারে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা মেয়েদের নিয়ে এসে এই পুতুলবাড়িতেই রাখতেন। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে যথেচ্ছ যৌনাচার করা হত। আজও নাকি সেই সব মেয়েদের চুড়ির শব্দ, নুপূরের নিক্কন, হাসি পুতুলবাড়ির থেকে রাত বাড়লেই ভেসে আসে।