দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাস। এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও। দুর্গাপুজোকে জনসাধারণের পুজো হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন।

ষোড়শ শতকে দুর্গাপুজো ছিল বাংলার জমিদারদের। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ১৬১০ সালে বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরীর পরিবার দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন। পরবর্তীতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু চেয়েছিলেন দুর্গাপুজো উদযাপিত হোক সকলের জন্য।

সেই সময় গড়ে উঠেছিল অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর সমিতির মতো একাধিক বিপ্লবী সমিতি। সেখানে বৈপ্লবিক কাজকর্মের পাশাপাশি দুর্গাপুজোর উদযাপন নিয়েও আলোচনা হত। এরকমই এক পুজো কমিটির সভাপতিও হয়েছিলেন নেতাজী ১৯৩৮ সালে।

১৯৩০-এর দশকে দিল্লিতে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের কাছে কালীবাড়িও প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৫ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথম সভাপতি হিসাবে মন্দির কমিটিতে ছিলেন। এই কালী বাড়ি বাংলার বাইরে দুর্গাপূজা উদযাপনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

১৯২০-এর দশকে, যখন সুভাষ মান্দালয় জেলে ছিলেন, তখন তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে পুজোর বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে লেখা ছিল যে তিনি আশা করছেন দেবী মা আসবেন, বছরের পর বছর ধরে কারারুদ্ধ থাকা বন্দিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের যন্ত্রণা লাঘব করবেন। তাই তিনি জেলে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

দাবি ছিল দুর্গাপুজোর চাঁদা হিসাবে জেলবন্দিরা ১৪০ টাকা দেবেন, ব্রিটিশ সরকার অনুদান দেবে ৬৬০ টাকা। এদিকে বড়দিনের উৎসব উদযাপনের জন্য সরকার ১২০০ টাকা অনুদান প্রদান করৎ বৃটিশ সরকার। জেলবন্দিদের দাবি শেষ পর্যন্ত মঞ্জুর হয়নি। সরকার কোনও অনুদানই দিতে রাজি হয়নি। পরিবর্তে বলা হয় যে ৬৬০ টাকা খরচ হবে তা বন্দিদের ভাতা থেকে কেটে নেওয়া হবে।

সুভাষ চন্দ্র বসু এই প্রস্তাব মানতে চাননি। তিনি বার্মা সরকারের মুখ্য সচিবের কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠান। কিন্তু সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়। অবশেষে রাজনৈতিক বন্দিরা তাঁদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের অধিকারের জন্য অনশন শুরু করেন। বন্দিরা সরস্বতী পূজার জন্য অতিরিক্ত ৬০ টাকা দেওয়ার দাবি জানান। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দিদের ভাতা হিসেবে ৩০ টাকা করে দেওয়া হয়। সেই প্রথম বন্দিদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার।

বাংলার সাবেক দুর্গার ঐতিহ্য বহন করে একচালা প্রতিমা। এই একচালা প্রতিমা তৈরির কৃতিত্ব কিন্তু নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুরই। ১৯৩৮ সালে বাগবাজার সার্বজনীন পুজো কমিটির সভাপতি ছিলেন নেতাজী। সেই বছর পঞ্চমীতে আগুন লেগে পুজো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। প্যান্ডেলের কোনো ক্ষতি না হলেও প্রতিমা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। সেই সময় সুভাষ চন্দ্র বসু কারিগরদের আলাদা আলাদা পাঁচটি মূর্তি না তৈরি করে বরং একচালায় অর্থাৎ একই ফ্রেম ব্যবহার করে আলাদাভাবে প্রতিমা তৈরি করতে। এতে সময় বাঁচবে, একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিমা একসাথেই তৈরি করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here