স্বাস্থ্যভবনের সামনে আরজি কর মামলার সুবিচারের দাবীতে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ। তাঁদের সঙ্গে সামিল হয়েছেন বহু ডাক্তার থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিরাও। তাঁদের কণ্ঠে একটি ডাক ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার জুনিয়ার ডাক্তারদের কাজে ফিরতে নির্দেশ দিচ্ছেন। সেই মর্মে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের আবার ডাকা হল বৈঠকের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে সোমবার বিকাল ৫টায় তাঁদের ডাকা হয়েছে। সময় জানিয়ে মেইলটি করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
সেই ইমেলে লেখা হয়েছে, ‘‘গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। নাগরিক হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা আমাদের কর্তব্য। তাই এটা আপনাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক করানোর জন্য আমাদের তরফে পঞ্চম এবং শেষ চেষ্টা। খোলামনে আলোচনার জন্য কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, সুচিন্তার জয় হবেই। আপনাদের আগের দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বৈঠকের কোনও ভিডিয়োগ্রাফি বা সরাসরি সম্প্রচার হবে না, কারণ বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বৈঠকের পুঙ্খানুপুঙ্খ কার্যবিবরণীতে দু’পক্ষের সই থাকবে।’’
ইমেলে আরও বলা হয়েছে, ‘‘সোমবার বিকাল ৫টায় কালীঘাটে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আগের দিন ডাক্তারদের যে প্রতিনিধিরা বৈঠকের জন্য কালীঘাটে এসেছিলেন, তাঁদেরই সোমবারও আসতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’’ বিকাল ৪টে ৪৫ মিনিটের মধ্যে কালীঘাটে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের।
উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার তাঁদের ধর্নার সপ্তম দিন। এর মাঝে বার বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছে। ডাক্তারেরা প্রথম থেকে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের দাবিতে অনড় ছিলেন। প্রথমে নবান্নে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করলেও সে দিন বৈঠক হয়নি। সরকার সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হয়নি। তার পর শনিবার আচমকা সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যান মমতা। ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। সে দিনই আবার বিকালে তাঁদের কালীঘাটে ডাকা হয়। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার এবং বৈঠকের ভিডিয়োগ্রাফির দাবি নিয়ে মতানৈক্যে বৈঠক আবার ভেস্তে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন ডাক্তারেরা। মমতা নিজেও বেরিয়ে এসেছিলেন। বৈঠক না করতে চাইলে তাঁদের অন্তত চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা-ও হয়নি।
কালীঘাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাক্তারেরা জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো নিজেদের সব শর্তই ছেড়ে দিয়েছিলেন। সরাসরি সম্প্রচার এবং ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই বৈঠক করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষে তাঁদের বলা হয়, তিন ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করেছেন। আর বৈঠক সম্ভব নয়। আবার সল্টলেকের ধর্নামঞ্চে ফিরে আসেন ডাক্তারেরা। তার পর সোমবার আবার তাঁদের বৈঠকের জন্য ডাকা হল। সরকারের তরফে এটাই শেষ চেষ্টা, জানিয়ে দিলেন মুখ্যসচিব।