বিজেপির ধর্না কর্মসূচির বিরোধিতা করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেখানে গিয়ে তীব্রভাবে অসম্মানিত হতে হল আদালতকে। রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতিরা। সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে সরাসরি তাঁরা বলেছেন, “যেখানে ডান হাতে কাজ হয় না, সেখানে আপনারা বাঁ হাত ব্যবহার করেন। আপনাদের পদ্ধতি আমাদের জানা আছে।”
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মতলায় ধর্না অবস্থানের অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। হাই কোর্টে সেই আবেদন জানিয়েছিল তারা। সেই মামলায় বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, তাকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘বুধবার শহরে চারটি বড় কর্মসূচি হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট কর্মসূচি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপত্তি আসেনি। এক পক্ষ বিচার করলে তো হবে না। উভয় পক্ষই কর্মসূচি করছে।’’
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপিকে ধর্না কর্মসূচির জন্য দু’টি জায়গার বিকল্প দিয়েছিল হাই কোর্ট। ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিং অথবা ওয়াই চ্যানেলে ধর্নার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। একক বেঞ্চ জানিয়েছিল, উপরোক্ত দু’টি জায়গার যে কোনও একটিতে আট দিন ধরে ধর্না দিতে পারবে বিজেপি। এদিকে রাজ্যের বক্তব্য ছিল, ডরিনা ক্রসিংয়ে টানা আট দিন কর্মসূচি চললে যানজটে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে। তাই বিজেপির কর্মসূচি হোক ওয়াই চ্যানেলে এবং দু’দিনের জন্য ওই কর্মসূচির অনুমতি দিক আদালত। রাজ্যের যুক্তি শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবাই কর্মসূচি করছে। নির্দিষ্ট একটি দলের ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম হবে কেন?’’
তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘শহরের রাস্তা বন্ধের জন্য একটি মিছিলই যথেষ্ট। আমি নিজেও বহু বার যানজটের কবলে পড়েছি। এমনকি এ সবের জন্য স্কুলও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সোমবার কলকাতা পুলিশের ডিসি হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানিয়েছেন, বিচারপতিরা কোন পথ ব্যবহার করে আদালতে আসবেন। কিছুটা এ-পথ, কিছুটা বি-পথ, তার পর লঞ্চ, তার পর আবার গাড়ি! আমি আমার চালককে বলেছিলাম, অন্য রুট ধরতে হবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকো। তাই ২৫-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেছি।’’
বিষয়টি খতিয়ে দেখে মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ রাজ্যকে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘নিজেরা মিটমাট করে নিন। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে মামলা করলে, তা খারিজ করে দেব। আমরা তো আপনাদের পদ্ধতি সম্পর্কে জানি। যেখানে ডান হাতে কাজ হয় না, বাঁ হাত ব্যবহার করেন। বিশদে আরও কিছু বললে আপনাদেরই লজ্জায় পড়তে হবে।’’
পাশাপাশি আরজি কর প্রসঙ্গে হাই কোর্টের পরামর্শ, ‘‘একটি ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করুন। নতুন করে আঘাত দেবেন না, যাতে তা আরও বেড়ে যায়। বিক্ষুব্ধ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝানোর ব্যবস্থা করুন।’’