দেবাদিদেব মহাদেবের আদি-অন্ত নেই। তিনি স্বয়ম্ভু, তাঁর জন্মও নেই, মৃত্যুও নেই। ভোলানাথের স্ত্রী পার্বতী এবং দুই সন্তান কার্তিক-গণেশ। আপনি কি জানেন মহাদেবের একটি বোন ছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, শিবের সঙ্গে পার্বতীর বিয়ের পর দেবী মাঝে মধ্যে মাঝে বাড়িতে একাকী বোধ করতেন। পার্বতী ভাবতেন তাঁর একজন ননদ থাকলে বেশ হত। প্রথমে অবশ্য কিছুই তিনি শঙ্করকে বলেননি। কিন্তু শিবশম্ভূ তো সর্বজ্ঞ। তাই তিনি আগেই সবটা বুঝতে পেরেছিলেন। তবুও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর কী হয়েছে। উত্তরে মনের কথা স্বামীর কাছে খুলে বললেন দেবী।
এতে ভগবান দেবীকে বললেন, আমি তোমাকে একটা ননদ তো দিতেই পারি, কিন্তু তুমি কি তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে? দেবী বললেন, “ভগবান, আমি কেন তাঁর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারব না?” স্ত্রীর মুখে এই কথা শুনে ভোলেনাথ বললেন, “ ঠিক আছে দেবী, আমি তোমার জন্য ননদ আনছি।” স্বয়ম্ভু তাঁর নিজের শক্তি দিয়ে এক নারীকে সৃষ্টি করলেন এবং পার্বতীকে বললেন, “এই যে তোমার ননদ, এর নাম আশাবরী দেবী।”
ননদকে দেখে পার্বতী খুব খুশি হলেন। কিংবদন্তী অনুসারে, আশাবরী দেবী স্নান সেরে পার্বতীর কাছে খাবার চান। দেবী তাঁকে খাবার পরিবেশন করেছিলেন, কিন্তু আশাবরী এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলেন যে তিনি পুরো পরিবারের জন্য তৈরি খাবার খেয়ে ফেলেছিলেন। পরিবারের অন্যদের খাওয়ার কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। এই নিয়ে দেবী চিন্তিত হলেন। এর পর আশাবরী দেবীর বস্ত্রের প্রয়োজন হল। পার্বতী তাঁকে নতুন জামা বস্ত্র দিলেন। এদিকে আশাবরী দেবী ছিলেন বেশ স্বাস্থ্যবতী। ফলে বস্ত্রও কম পড়ছিল। এদিকে পার্বতী যখন ননদের জন্য আরও বস্ত্র খুঁজতে ব্যস্ত তখন আশাবরী দেবীর মনে হল তিনি এখন তাঁর বৌদির সঙ্গে মজা করতে পারেন।
আশাবরী দেবী পার্বতীকে তাঁর গোড়ালিতে সৃষ্টি হওয়া ফাটলের মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন। এদিকে শিব স্ত্রী খুঁজতে খুঁজতে বোনের কাছে আসলে আশাবরী দেবী দেবাদিদেবকে মিথ্যা বললেন। ভগবান ভোলানাথ বুঝতে পারলেন আশাবরী মিথ্যা বলছেন। আশাবরী দেবী আচমকা মাটিতে পা দিয়ে ঠুকলে পার্বতী দেবী গোড়ালির ফাটল থেকে বের হলেন। ক্রোধে রক্তবর্ণ হয়ে উঠলেন শিবজায়া। মাতা পার্বতী ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে বললেন, দস্যি ননদটির তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করুন। মহাদেব হেসে বোনটিকে কৈলাস থেকে বিদায় দিলেন।