দীপাবলীর আলোকমালায় সেজে উঠছে আঙ্গিনা। দিকে দিকে যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই আলোর রোশনাই। শ্যামাপুজোর ঠিক একদিন আগে অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। বলা হয় এই ক’দিন খুব সাবধান। যে কোনও মুহূর্তে ঘাড় মটকাতে পারেন তেঁনারা। তাই এই দিন বেশ কিছু আচার পালিত হয়।

ভূত চতুর্দশীর অন্যতম একটি আচার যেমন ১৪ শাক খাওয়া। চতুর্দশী তিথিতে ১৪ রকমের শাক কিনে রান্না করে খাওয়াই হল নিয়ম। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন মৃত্যুর পর মানুষের দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। যারা গিয়েছেন তাঁরা সশরীরে হয়তো নেই। কিন্তু মিশে রয়েছেন আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, আগুনের মধ্যে। তাই পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেই প্রকৃতিজাত এই শাক খাওয়ার নিয়ম। এর মধ্যে থাকে পুঁই শাক, বেতো শাক, ওলের পাতা, সর্ষে শাক, নিম পাতা, জয়ন্তীর পাতা, কালকাসুন্দে, হেলেঞ্চার শাক, পলতা, শৌলফ, ভাঁটপাতা, গুলঞ্চ ও শুষণী। পুরাণে থাকলেও ভূত চতুর্দশীকে একান্তই আপন করে নিয়েছে বাঙালি। ভারতের অন্য কোনও জাতি এমন কোনও উৎসব করে বলে তো জানা যায় না।

এই ১৪ শাক ধোয়া জল অনেকেই বাড়ির আনাচে কানাচেই ছড়িয়ে দেন। বলা হয় তাতে বাড়িতে যদি কোনও অপশক্তির বাসা থাকে তা দূর হয়ে যায়। এ তো গেল পুরাণ, ধর্মবিশ্বাসের কথা। বিজ্ঞানীরা বলছেন যেহেতু এই সময় হেমন্তকাল পড়ে যায় তাই বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ১৪ শাক সেই সব রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আগে গ্রামে-গঞ্জে মাঠ-ঘাট, চাষের জমির অভাব ছিল না। তাই ১৪ রকমের শাক মেলাও এমন কিছু কঠিন ব্যাপার ছিল না। এখন শহরের বাজারে কুঁচিয়ে রাখা শাকই কোথাও ১০ টাকা কোথাও ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রশ্ন হল, তাতে আদৌ ১৪ রকমের শাক থাকে কি! উত্তরটা সকলেই জানেন, মানসিক শান্তিই আসল কথা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here