প্রতিটি পুজোরই কিছু বিশেষ ফুল রয়েছে। যেমন কালী পুজোয় দেবী কালিকার জন্য নিবেদিত হয় জবা ফুল। দেবী দুর্গার আরাধনায় প্রয়োজন হয় স্থলপদ্ম। নারায়ণের জন্য নিবেদিত অর্ঘ্য তুলসীপাতা, দেবাদিদেব মহাদেব ধুতরো, আকন্দ, বিল্বপত্রেই তুষ্ট। তেমনই দেবী সরস্বতী হলেন পলাশপ্রিয়া। পলাশফুল ছাড়া দেবীর আরাধনা অসম্পূর্ণ। আজ জেনে নেওয়া যাক বীনাপাণির আরাধনায় পলাশ কেন অপরিহার্য।
মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে ঘরে ঘরে সরস্বতীর আবাহন করেন আপামর বাঙালি। মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে পুজিত হন দেবী সরস্বতী। আর দুদিন পরেই বাগদেবীর আরাদশনায় মাতবেন সকলে। বসন্তকালের পঞ্চমী তিথিতে পুজো হয়, তাই এই পঞ্চমী বসন্ত পঞ্চমী নামে পরিচিত। বছরের এই সময়টাতেই রাঙা হয়ে প্রকৃতির বুকে ফুটে ওঠে পলাশ। কিং শুকের আগুনে আভায় সুন্দর হয় পৃথিবী। বছরের প্রথম ফুল গ্রহণ করে দেবীও তাই হয়ে ওঠেন পলাশপ্রিয়া। সেই আদিকাল থেকেই এই নিয়ম চালু হয়েছে যা আজও বর্তমান।
এছাড়াও পুরাণ মতে, দেবী সরস্বতীর সঙ্গে প্রজনন এবং উর্বরতা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব মোচনের সম্পর্ক রয়েছে। ঋষি গৃৎসমদ ঋক্মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতী।’ যেখানে সরস্বতীকে মাতৃশ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠ নদী এবং শ্রেষ্ঠ দেবীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে তা ছাড়াও আরও এক কারণ রয়েছে। পলঅ্যাশ রক্তবর্ণের। নারী যখন ঋতুমতী হয় তখন থেকে সে একটু একটু করে গর্ভ ধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। লোহিত রক্ত নিয়েই নারী হয়ে ওঠে রজঃশলা। তাই বন্ধ্যাত্ব মোচনের প্রতীক হিসেবে দেবী সরদস্বতীর কাছে নিবেদিত হয় পলাশ।
একটা সময় পর্যন্ত নারীরা পুত্রকামনার আশায় পলাশের পাতা বেটে খেতেন। সরস্বতী পুজোর পরদিন হয় শীতলষষ্ঠী। দেবী ষষ্ঠীর আবাহনে সন্তানলাভ হয় বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই। সেই বিশ্বাসে খাওয়া হয় শীতলপান্তা।