ডিসেম্বরের বিবর্ণ শীতের মরশুমে যেন রামধনু রঙ আনে ক্রিসমাস। কেক, উপহার, সান্তা ক্লজ, গীর্জায় প্রার্থনা, ঝলমলে সাজানো পথঘাট এসব যেন এক অননয় আনন্দের সঞ্চার করে প্রত্যেকের মনে। খ্রিষ্ট দেবতা যীশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে সারা দেশব্যাপী ২৫ ডিসেম্বর দিনটি ক্রিসমাস বা বড়দিন হিসাবে পালিত হয়।
ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে এই দিনে এক জরাজীর্ণ গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব যার নাম যীশু খ্রিস্ট। তখন থেকেই খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি কে বড়দিন হিসেবে পালন করে আসছে। দেড় হাজার বছরের অধিক সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে বড় দিন। তবে খ্রিস্টানদের উৎসব হলেও বড়দিনের আনন্দ কোন জাতির বেড়াজালে আবদ্ধ নেই। দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। তবে এইদিনের ইতিহাস অনেকেরই অজানা। কেনই বা এই দিনটিকে ‘বড়’দিন বলা হয়? আসুন আজ জেনে নিই সেই কাহিনি-
ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখটি খ্রিষ্ট দেবতা যীশু খ্রিষ্টের জন্মদিন হিসাবে পালিত হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মত , এই তারিখের ঠিক নয় মাস আগে মা মেরীর গর্ভে এক আলোক জ্যোতির মতো প্রবেশ করেন যীশু। সেই হিসেবেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন ধরা হয়। ইতিহাস বলছে, রোমান সাম্রাজ্যের সময় ৩৬৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বড়দিনের উত্সব পালন করা হয়। পোপ জুলিয়াস প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন উত্সব পালন করার ঘোষণা করেন। সেই থেকেই বিশ্বব্যাপী এই দিনটি বড়দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মতে, যীশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে মানুষ রুপে জন্ম নেন পৃথিবীর পাপাচার হতে মানুষ কে মুক্তি দিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করতে। এই মহত্ তথা ‘বড়’ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই ধরাধামে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিষ্ট। খ্রিষ্ট দেবতা ক্ষমায় বিশ্বাসী ছিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি তাঁর হত্যাকারীদের ক্ষমা প্রার্থনা করে যান। তিনি বলেন, ‘পিতা ওরা জানে না ওরা কি করছে, ওরা অবুঝ ও অজ্ঞান, তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও।’ যীশুর এই প্রেমের বানী এখন খ্রিস্টান ধর্ম ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের কাছে। মানুষ আপন করে নিয়েছেন বড়দিনের উত্সবকে।
কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে যীশুর জন্মদিনের বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু লেখা নেই। ২৫ তারিখই যীশুর জন্মদিবস কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা মত পার্থক্য। তবে মত অমিল থাকলেও যীশু খ্রিষ্টের জীবন দর্শন, তাঁর বানীর মাহাত্ম্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল।