আজ রাখী পূর্ণিমা। এই বিশেষ দিনে বোনেরা ভাইদের হাতে রাখী পরিয়ে তাদের মঙ্গলকামনা করে। তবে আপনি কি জানেন, যে রাখী কিন্তু কেবল বোনেরা ভাইকেই পরায় না। স্বামীর মঙ্গল কামনায় তাঁর হাতেও স্ত্রীরা রাখী বাঁধতে পারেন। এর উল্লেখ রয়েছে পুরানে।
ভারতের রাজস্থানে প্রচলিত রয়েছে লুম্বা রাখী। লুম্বা কথার অর্থ চুড়ি। রাজস্থানের মেয়েদের যদি দাদা থাকে এবং সেই দাদা যদি বিবাহিত হন, তা হলে বোন দাদার সঙ্গে বৌদিকেও রাখী পরিয়ে পালন করা হয় রাখী পূর্ণিমা। একে ‘লুম্বা রাখী’ বলে। রাজস্থানী শব্দ ‘লুম্বা’ কথার অর্থ হল ‘চুড়ি’। নারী শক্তিকে উদযাপন করতেই এই প্রথা বলে প্রচলিত।
মহারাষ্ট্রে রাখী পূর্ণিমা ‘নারিয়াল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। রাখীপূর্ণিমার দিন সমুদ্রে নারকেল অর্পণ করে এখানকার মানুষ ভগবান বিষ্ণুর প্রার্থনা করেন।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, একবার দেবরাজ ইন্দ্র রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। তখন ইন্দ্রের মঙ্গল কামনায় তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী দেবরাজের হাতের কব্জিতে একটি সুতো বেঁধে দিয়ে ছিলেন। এই দিনটি ছিল রাখী পূর্ণিমা।
পুরানের আর একটি গল্প বলে ভগবান বিষ্ণুকে নিজের তপস্যা দ্বারা সন্তুষ্ট করেন রাজা বলি। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু বর হিসাবে রাজা বলির প্রাসাদে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দেবী লক্ষ্মী তো থাকতে পারবেন না স্বামীকে ছেড়ে। তখন তিনি রাজা বলির হাতে রাখী পরিয়ে, উপহার হিসাবে ভগবান বিষ্ণুকে প্রতিশ্রুতিমুক্ত করেন।
মহাভারতেও রাখীর উল্লেখ রয়েছে। একবার শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে গেলে নিজের শাড়ি ছিঁড়ে সেই টুকরো তাঁর সখার হাতে বেঁধে দেন দ্রৌপদী। প্রতিদানে কৃষ্ণ কথা দেন যে কোনও পরিস্থিতিতে দ্রৌপদীকে রক্ষা করবেন। এরপর দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেল তাঁকে রক্ষা করেন স্বয়ং কৃষ্ণ।
ভারতের ইতিহাস বলে ৩২৬ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। তখন ভারতের এক ছোট রাজ্যের রাজা ছিলেন পুরু। আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা স্বামীর সুরক্ষার কথা ভেবে পুরুকে একটি রাখী বা পবিত্র সুতো পাঠান। সেই রাখী গ্রহণ করেন রাজা পুরু।