ভগবান শিব এবং মা পার্বতীর কন্যা ছিলেন অশোক সুন্দরী। তিনি ছিলেন অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী। তাঁর জন্ম সংক্রান্ত কাহিনী পদ্মপুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একদিন মাতা পার্বতী মহাদেবকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। শিব প্রেয়সীর ইচ্ছা পূরণ করেন এবং তাঁকে নন্দনকাননে নিয়ে যান।
সেখানে, মাতা পার্বতী একটি নির্দিষ্ট গাছ, কল্পবৃক্ষের প্রতি গভীর অনুরাগ গড়ে তোলেন। এই গাছটি ইচ্ছা পূরণ করার গাছ ছিল, তাই মাতা পার্বতী গাছটিকে কৈলাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল কৈলাসে গাছটিকে নিয়ে গিয়ে বপন করবেন।
তারপর কঈলাসে নিয়ে গিয়ে দেবী বৃক্ষের থেকে একটি কন্যা কামনা করেন। কল্পবৃক্ষ অবিলম্বে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করে। দেবী পার্বতী এক অতীব সুন্দ্রী কন্যার জন্ম দেন যার নাম রাখা হয় অশোকসুন্দরী। অশোক সুন্দরীর সৌন্দর্যের কারণে মা পার্বতী তাকে বর দিয়েছিলেন যে দেবরাজ ইন্দ্রের মতো শক্তিশালী যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হবে।
অশোক সুন্দরীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাজা নহুষের সাথে, যিনি ছিলেন চন্দ্রবংশী যযাতীর নাতি। একদিন অশোক সুন্দরী তার বন্ধুদের সাথে নন্দনবনে ভ্রমণ করছিলেন, এমন সময় হুন্ড নামে এক দুষ্ট রাক্ষস সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি অশোক সুন্দরীর সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। অশোক সুন্দরী তাকে জানান যে রাজা নহুশের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। একথা শুনে হুন্ড রেগে যান এবং অশোক সুন্দরীকে হুমকি দেন যে তিনি নহুষকে হত্যা করবেন এবং তাঁকে বিয়ে করবেন। অশোক সুন্দরী রাক্ষসকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তার মৃত্যু হবে নহুষার হাতে।
অশোক সুন্দরীকে পাওয়ার জন্য হুন্ডরা রাজা নহুষকে অপহরণ করে। হুন্ড যখন নহুষকে অপহরণ করেছিল, তখন সে ছিল শিশু। একজন দাসী নহুষকে উদ্ধার করে ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রমে নিয়ে যান এবং তাকে লালন-পালন করেন। নহুষ যখন যুবক হলেন, তখন তিনি হুন্ডাকে হত্যা করলেন। এরপর মা পার্বতী ও ভগবান শিবের আশীর্বাদে নহুষ ও অশোক সুন্দরীর বিয়ে হল। এই বিবাহ থেকে অশোক সুন্দরী একটি সাহসী পুত্র এবং শত সুন্দরী কন্যার আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।
ইন্দ্র যখন ব্রহ্মাকে হত্যার অপরাধে আত্মগোপন করেন, তখন দেবতারা রাজা নহুষকে দেবরাজের সিংহাসনে বসান। ইন্দ্রর পদ লাভের পর নহুষের মধ্যে অহংকার ও অধর্ম প্রবেশ করে। একদিন, সে ইন্দ্রাণী শচীকে অশালীন উদ্দেশ্য নিজের প্রাসাদে ডাকেন। শচী ইন্দ্রের কাছে যান। ইন্দ্র শচীকে পরামর্শ দেন রাজা নহুষকে বার্তা পাঠাতে তিনি যেন সাত ঋষির পালকিতে চড়ে শচীর কাছে আসেন।
নহুষ ঋষিদের কাছ থেকে পালকিতে নিয়ে তাতে চড়ে শচীর কাছে গেলেন। কিন্তু ঋষিদের ধীরগতিতে ক্রুদ্ধ হয়ে নহুষ ঋষি অগস্ত্যকে পদাঘাত। এতে ঋষি অগস্ত্য তাকে দশ হাজার বছর সাপের আকারে বেঁচে থাকার অভিশাপ দেন। নহুষ যখন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সমাধান জিজ্ঞাসা করলেন, তখন ঋষি অগস্ত্য তাকে বললেন, নহুষের প্রশ্নের উত্তর যে দেবে সে তাঁকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারবে।