
কৌশিক চক্রবর্তী
২ ডিসেম্বর, কলকাতা:
‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি,
মাঝখানে ‘খেলা’ ওই হয়ে চলে যায়’
বিখ্যাত বাংলা গানের দুই কলি একটু পরিবর্তন করতে হল সিএবির ঘরোয়া ক্রিকেটের দায়িত্ব যাঁদের উপর রয়েছে তাঁদের স্বার্থে।
ডুমুরজলা ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পিচ প্রস্তুত না হওয়ার পরেও প্রাথমিক ভাবে ম্যাচ দেওয়া’কে কেন্দ্র করে যে খবর sportsnscreen.com প্রকাশ করেছিল তার পর চলছে একে অপর’কে দোষারোপের পালা। শুধু বাংলা নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর রাজ্যের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা প্রবল। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যেমন ছিলেন দাপুটে নেতা তেমন-ই দাপুটে প্রশাসক। বিসিসিআই-তেও যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনই নেতৃত্ব দিয়েছেন/দিচ্ছেন সিএবিতেও। কিন্তু মহারাজের পক্ষে সমস্তটা একা করা সম্ভব নয়। ফলে বিভিন্ন দায়িত্ব বিভিন্ন কমিটি’কে ভাগ করে দেওয়া। কিন্তু মহারাজ নামের জয়ধ্বনি দিয়ে আর সুযোগ পেলেই ঘরে ঢুকে, আমরা দাদার কত কাছের প্রমাণ করার কোনও প্রয়াস বাদ না রাখা কর্তারা কতটা দায়িত্ববান সেটাই প্রশ্ন! কমিটির চেয়ারম্যান হব, প্রমোশন নেব, পদ বাগিয়ে বসবো চিন্তা রাখা কর্তা ব্যক্তিদের জন্য আবারো প্রশ্নের মুখে সিএবির ঘরোয়া ক্রিকেট।
গত কাল হাইকোর্ট মাঠে খেলা ছিল ফ্রেন্ডস অ্যাথলেটিক্স ক্লাব এবং হাইকোর্ট ক্লাবের মধ্যে। ম্যাচ দেখতে এসে এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকতে হলো। যেই পিচে সকাল সাড়ে ৯’টা থেকে খেলা হওয়ার কথা সেই পিচে কোন রকম হাত দেওয়া না হলেও তার ডান পাশে এবং বাম পাশে দু’টি পিচেই জল দেওয়া হয়। সাধারণত মাঠের ৩০ গজ সার্কেলে ভেজা থাকলে খেলা শুরু করান না আম্পায়রা। বিশেষ করে যে পিচে খেলা হবে তার পার্শ্ববর্তী দু’টি পিচে জল দেওয়াও যায় না। মাঠের কন্ডিশন দেখে দায়িত্বে থাকা মালিদের আম্পায়রা জানান চট দিয়ে রোল করে পাশের দুটি পিচ শুকনো করতে কারণ এই পরিস্থিতিতে খেলানো যায় না। কিউরেটর সফি আহমেদকে সেই কথা জানানো হলে প্রথমে তিনি রাজি হন না। উল্লেখ্য, জলটা তিনিই দিয়েছিলেন ওই দুই পিচে।
এরপর ঘটনার কার্যক্রম জানানো হয় গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান অমিতাভ আড্ডি এবং যুগ্ম সচিব মদনমোহন ঘোষ’কে। প্রথম নিমরাজি হলেও পরে বেগতিক দেখে সফি আহমেদ আবার মাঠে এসে সংশ্লিষ্ট জায়গায় চট দিয়ে রোল করে কোনও রকমে খেলা শুরু হওয়ার ব্যবস্থা করেন। সকাল সাড়ে ৯’টায় খেলা ফলে টস করতে হয় ৯’টা থেকে ৯:১৫ -এর মধ্যে। সাধারণত আম্পায়ার’রা ৩০ মিনিট আগে টস করেন। যেহেতু যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাশ্ববর্তী দুই পিচ শুকনো করার কাজ চলছিল তাই ৯:১৫ -এ টস করে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শুরু করা হয়। যদিও পাশের দু’টি পিচ পুরোপুরি ড্রাই করা যায়নি সেটা অত তাড়াতাড়ি হওয়ার কথাও নয়।
মাঠে যখন খেলা রয়েছে সেখানে ন্যূনতম বিষয়গুলি যাতে যথাযথ থাকে সেই বিষয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব তো গ্রাউন্ডস কমিটি, ট্যুর-ফিক্সচার কমিটি, টুর্নামেন্ট কমিটি কিংবা যুগ্ম সচিবের উপরই বর্তায়। চেয়ার বাগিয়ে নিয়ে তাঁরা কি উদাসীন? নাকি সম্পূর্ণ ভুলটাই কিউরেটরের। এর দায় কার?
যুগ্ম সচিব মদনমোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এই রকম ভাবে কিছু বলা যাবে না। আমি জানিই না ওখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে। আমি ঘরে বসে আছি। আপনি কিউরেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
কিউরেটর সফি আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি সিএবি’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তাঁর কথায়, “আমি ফোনে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। আপনি সিএবি’তে গিয়ে কথা বলুন।” অপর দিকে গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান অমিতাভ আড্ডি বলেন, “পিচে কোনও জল দেওয়াই হয়নি। ওটা শিশির পড়ে ভিজে ছিল।” এখানে প্রশ্ন একটাই, শিশির পড়ে পাশের দুটি পিচ ভিজে গেল আর মাঝের পিচ খটখটে শুকনো রইলো কিভাবে?
এই তিন জনের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট কেউ নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। একে অপরের কোর্টে বল ফেলে হাত ধুয়ে ফেলতে ব্যস্ত। যুগ্ম সচিব দেখাচ্ছেন কিউরেটর’কে, কিউরেটর দেখাচ্ছেন সিএবি-কে। গ্রাউন্ডস কমিটি আবার শিশিরের দোহাই দিতে ব্যস্ত।
ছবি: প্রতীকী চিত্র



