সমুদ্র মানেই আমরা দিঘা মন্দারমণি ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না। তবে আরও একটি জায়গা রয়েছে যেখানে আপনি অল্প খরচেই ঘুরে আসতে পারবেন। তবে সেখানে যেতে গেলে ঝক্কি নেহাত কম নয়। তার উপর সেখানে খাওয়ার জন্য ভাত, ডাল, সব্জি, মাছের অভাব না হলেও, ঝাঁ চকচকে নরম গদির আরামের আস্তানা মিলবে না। তবে মিলবে প্রকৃতির সান্নিধ্য। ঝাউবনে ঘেরা সমুদ্র সৈকত। সেই টানেই যদি পা বাড়াতে পারেন, তবে চলুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবর্ধনপুরে। এখানেই রয়েছে নির্জন একাধিক সৈকত। কাকদ্বীপ মহকুমার পাথরপ্রতিমার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম গোবর্ধনপুর। গ্রামের সরল জীবনযাত্রা, ঘরোয়া খাবার আর সমুদ্র দর্শন একসঙ্গে করতে চাইলে কোনও এক সকালে বেরিয়ে পড়ুন ট্রেন কিংবা বাসে। তবে এখানে আসা কিছুটা ঝক্কির। বাস বা ট্রেনে এসে দীর্ঘ পথ নদীতে নৌকা করে যেতে হয়। তার পর আবার ভ্যান-যাত্রা। তবে নদীপথ ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে যেতে যেতেই ভুলে যাওয়া যায় শহুরে ক্লান্তি।

বর্ষার পরে গেলে এখানে মিলবে সবুজ প্রকৃতি। গ্রাম ঘিরে রয়েছে ছোট-বড় গাছ। সাগর পারে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সৈকতে কোনও চাকচিক্য নেই। আসলে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে জায়গাটি এখনও বিশেষ জনপ্রিয় নয়। কিছু উৎসাহী, ভ্রমণপিপাসু মানুষই এর খোঁজ জানেন। মাঝেমধ্যে এখানে এসে পড়েন ছকভাঙা পথে ঘুরতে চাওয়া লোকজন।

বঙ্গোপসাগরের তিরে গোবর্ধনপুরের তিন দিকেই সমুদ্র সৈকত। আশপাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সুন্দরী, গেঁওয়ায় সৈকত সেজে উঠেছে সবুজে। তারই মাঝে দেখা মেলে ট্রলারের। সৈকতের পাশে সাজানো গোছানো দোকান, পরিচ্ছন্ন আলোকজ্জ্বল জায়গা খুঁজলে অবশ্য এই জায়গা হতাশই করবে। তবে যদি শুধু প্রকৃতির সান্নিধ্যটুকুই একমাত্র চাহিদা হয়, তা হলে এখানে এলে নিরাশ হতে হবে না।

কীভাবে যাবেন?

ধর্মতলা থেকে বাসে পাথরপ্রতিমা হয়ে নৌকা করে যেতে হবে চাঁদমারি ঘাট। ট্রেনে কাকদ্বীপ হয়ে পাথরপ্রতিমা এসেও নৌকা ধরতে পারেন। এ ছাড়া শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেনে চেপে নামতে হবে লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে। স্টেশনের কাছ থেকে রামগঙ্গা ঘাটে আসার জন্য বাস ও ট্রেকার পাওয়া যায়। রামগঙ্গা ঘাট থেকে নৌকো করে চাঁদমারি ঘাট। দু’পাশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য তার মধ্যে দিয়ে নৌকা করে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা। প্রায় দেড় ঘণ্টার যাত্রাপথ। নৌকা থামে গোবর্ধনপুরের চাঁদমারি ঘাটে। সেখান ভ্যানে করে আরও ১৫ কিলোমিটার গেলে পৌঁছান যায় গোবর্ধনপুরে। চাঁদমারি থেকে ভ্যান ভাড়া করে সরাসরি গোবর্ধনপুর যাওয়াই ভাল। না হলে তিন বার ভেঙে যেতে হবে।

থাকার জায়গা

এখানে থাকার জন্য একদম সাধারণ তিনটি জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি অতিথিশালা। এখানে রামকৃষ্ণ মিশনেরও একটি থাকার জায়গা রয়েছে। খাবারের বন্দোবস্তও তাঁরাই করেন। তবে আগে থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে এলে অসুবিধা হতে পারে। এখানকার খাওয়া-দাওয়া সাধারণ। তবে মোটা চালের ভাত, ডাল, সব্জি, মাছ পেতে কোনও অসুবিধা হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here