আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে পথে নেমেছেন ছোট পর্দা বড় পর্দা সব জগতের মানুষ। চারদিকে এখন একটাই স্লোগান, বিচার চাই। তাঁর মধ্যে বিতর্ক তৈরি করেছেন অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। তারপর থেকে মানুষ কাঞ্চনের উপর বেজায় চটেছেন টলিপাড়ার কলাকুশলীরা। সকাল সকাল বহু দিনের বন্ধু তথা সহকর্মী কাঞ্চনকে সমাজ মাধ্যমে নিজের বন্ধুবৃত্ত থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। পরিস্থিতি এমনই, নাটকের শো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন সুজন মুখোপাধ্যায়। আগামী বছর জানুয়ারি মাসে শিলিগুড়িতে ‘চেতনা’ নাট্যদলের সঙ্গে কাঞ্চনের ‘মাগনরাজার পালা’য় অভিনয় করার কথা ছিল। সুজন মুখোপাধ্যায় ফেসবুকে ঘোষণা করে সোমবার জানিয়েছেন, ওই শো বাতিল করা হয়েছে।

রবিবার আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত চিকিৎসকেদের উদ্দেশে কাঞ্চনের মন্তব্যে দানা বাঁধে বিতর্ক। তার পরই টলিপাড়ার অন্দরেই শুরু হয়েছে কটাক্ষ। তাঁর প্রকাশ মিলছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টে।

রবিবার কোন্নগরের মহিলা তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে যোগদান করতে এসেছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। সেখান থেকে তৃণমূলী সুরেই তিনি বলেন ‘‘যাঁরা কর্মবিরতি করছেন বা শাসকদলের বিরুদ্ধে বলছেন, তাঁরা সরকারি বেতনটা নিচ্ছেন তো? না কি নিচ্ছেন না? পুজোর বোনাসটা নেবেন তো? আমার প্রশ্ন এগুলো।’’ এই মন্তব্যই কাল হয়েছে কাঞ্চনের জীবনে।

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী প্রথম কাঞ্চনকে সমাজমাধ্যমে আক্রমণ করেন। তিনি সোমবার সকালে সরাসরি কাঞ্চনকে বন্ধুবৃত্ত থেকে বাতিল করেছেন। নেটনাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীর পোস্ট। শুরু থেকেই আরজি কর-কাণ্ডে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন ঋত্বিক। কাঞ্চন প্রসঙ্গে ফেসবুকে ঋত্বিক তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ঘাঁটা মল্লিক চাটা মল্লিক ফাটা মল্লিক টা টা মল্লিক।’’

প্রতিবাদ করতে হলে সরকারি বেতন ফিরিয়ে দেওয়ার যে যুক্তি কাঞ্চন দেখিয়েছেন তা অত্যন্ত বালখিল্য বলে মনে করছেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। ফেসবুকে ঋদ্ধি লিখেছেন, ‘‘যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারকে প্রশ্ন করতে গেলে সরকারি মাইনে ফেরত দিয়ে করতে হয়, তা হলে সেই একই নিয়মে কাঞ্চন মল্লিকের বাজে বকার জন্য বিধায়ক-সহ যে কোনও রাজনৈতিক পদ ফেরত দিয়ে অবিলম্বে স্কুলে ফেরত চলে যাওয়া উচিৎ। ভারতীয় সংবিধান না জেনে রাজনীতি করা তো দূরের কথা, ঠিক করে মোসাহেবিও করা যায় না।’’

ওই পোস্টেই কাঞ্চনের প্রতি ঋদ্ধির আক্রমণ, ‘‘আপনি আসলে কোনও দিনই মানুষের পাশে ছিলেন না, আপনি টাকার পাশে ছিলেন। তাই অবাক না হয়েই বলছি, প্রতিবাদ করার জন্য কেউ মাইনে বা বোনাস বা চাকরি ফেরত দেবেন না, আপনি বরং কোনও মেডিক্যাল কলেজে আপনার শিরদাঁড়াটা ফেরত দিয়ে আসুন।’’

অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাঞ্চনের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তিনি ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এমএলএ সাহেব কি নিজের পকেট থেকে সরকারি কর্মচারীদের মাইনে ও ডিএ দেন নাকি? আপনার মাইনেটাও যেমন সাধারণের করের টাকায় হয়, তাঁদেরটাও তা-ই হয়।’’ পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে কাঞ্চনের উদ্দেশে লেখেন, ‘‘রোগা হলেও চামড়া মোটা, আমিও দাদা চটি চাটা…কাঞ্চনরঙ্গ!’’

সব মিলিয়ে সোমবার দিনভর কাঞ্চনকে নিজ মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হতে হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here