
মনে করা হয় আজও সশরীরে মর্ত্যে উপস্থিত রয়েছেন বজরংবলী। তাঁর পুজো করলে সমস্ত ভয়, রোগ, সংকট দূর হয়। তবে শুধু বজরংবলীই নন, তাঁকে ছাড়া আরও ৭ জন চিরঞ্জীবী রয়েছেন, যাঁদের সম্পর্কে পৌরাণিক কাহিনিতে উল্লেখ পাওয়া যায়।.
পরশুরাম
বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার হলেন পরশুরাম। অমরত্বের আশীর্বাদ লাভ করেছেন তিনি। বৈশাখ শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে পরশুরামের জন্ম হয়। পরশুরামের তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে তাঁকে কুড়ুল দেন শিব। এটিই পরশুরামের অস্ত্র।
বিভীষণ
লঙ্কাপতি রাবণের ছোট ভাই ও রামের ভক্ত বিভীষণও অমরত্বের আশীর্বাদ পেয়েছেন। সত্যের সমর্থক বিভীষণের সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন রাম। বিভীষণকে লঙ্কার রাজা করার পাশাপাশি তাঁকে অমরত্বের আশীর্বাদও দেন তিনি।
রাজা বলি
নিজের শক্তি ও পরাক্রমের জোরে দেবতাদের পরাজিত করে সমস্ত লোককে নিজের অধীনস্থ করে রাখেন রাজা বলি। সমস্ত দেবতা তাঁর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিষ্ণুর কাছে যান। তখন বিষ্ণু বামন অবতার নিয়ে বলির কাছ থেকে তিন পা সমান জমি চেয়ে বসেন। এর পর এক পা পৃথিবী, অপর পা স্বর্গলোকে রাখেন, তৃতীয় পদ করেন বলির মাথায়। যার ভারে বলি পাতালে তলিয়ে যান। পৃথিবী ও স্বর্গের পরিবর্তে বিষ্ণু বলিকে পাতাল লোকের রাজা নিযুক্ত করেন। কথিচ আছে যে আজও পাতালে রাজা বলি রাজত্ব করেন।
ঋষি মার্কণ্ডেয়
শিবের পরমভক্ত ছিলেন ঋষি মার্কণ্ডেয়। কঠোর তপস্যাকে শিবকে প্রসন্ন কেরন এবং মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র সিদ্ধির কারণে চিরঞ্জীবী হন। শিবের কাছ থেকে অমর থাকার আশীর্বাদ লাভ করেন তিনি।
মহর্ষি বেদব্যাস
শ্রীমদভগবদ মহাপুরাণ-সহ একাধিক ধর্মগ্রন্থ রচনা করেন মহর্ষি বেদব্যাস। তাঁকে শ্রীহরির অংশ মনে করা হয়। পরাশর ঋষি ও সত্যবতীর পুত্র মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মকালীন নাম কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। বেদ বিন্যাস করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয় বেদব্যাস। কথিত আছে যে কলিকালের শেষ পর্যন্ত জীবিত থাকবেন বেদব্যাস। কল্কি অবতারের সঙ্গে বিরাজ করবেন তিনি।
অশ্বত্থামা
গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা মহাভারতের যুদ্ধে কৌরবদের সেনাপতি ছিলেন। কৃষ্ণের অভিশাপের কারণে অমরত্ব লাভ করেন তিনি। তাঁর ললাটে এক অমরমণি ছিল। যুদ্ধ শেষে পাণ্ডব বংশকে নির্মূল করার জন্য উত্তরার গর্ভে ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করে অভিমন্যুর গর্ভস্থ সন্তানের হত্যার চেষ্টা করেন। তখন কৃষ্ণের আদেশে ক্রোধবশত অর্জুন অমরমণি অশ্বত্থামার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেন। কৃষ্ণ অনন্তকাল পর্যন্ত অশ্বত্থামাকে মর্ত্যে দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোকের মধ্যে জীবিত থাকার অভিশাপ দেন।
কৃপাচার্য
কৌরব ও পাণ্ডবদের গুরু ছিলেন কৃপাচার্য। তাঁর বোন কৃপীর বিবাহ হয় দ্রোণাচার্যের সঙ্গে। এ কারণে কৃপাচার্য অশ্বত্থামার মামা হন। কৃপাচার্য তিন তপস্বীর মধ্যে অন্যতম, যিনি কৃষ্ণের বিরাট রূপের দর্শন করতে পেরেছিলেন। সপ্তঋষির মধ্যে অন্যতম হলেন কৃপাচার্য। পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি করার প্রস্তাব তিনি কৌরবদের দিয়েছিলেন। নিজের সুকর্মের কারণে অমরত্বের আশীর্বাদ লাভ করেন তিনি।
বজরংবলী
শিবের অবতার বজরংবলীও অমরত্বের আশীর্বাদ প্রাপ্ত। রাম যখন মর্ত্য ছেড়ে বৈকুণ্ঠের উদ্দেশে প্রস্থান করেন, তখন বজরংবলী পৃথিবীতে থাকার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন। মর্ত্যে চিরঞ্জীবী থাকার আশীর্বাদ দেন রাম।