কলকাতা, বনেদি বাড়ি, বিশাল দালান, ঝাড়লণ্ঠন সর্বোপরি দুর্গাপুজো-এ যেন কল্লোলিনীর বৈশিষ্ট্য। তাই তিলোত্তমার বুকে বনেদি বাড়ি তো কম্নেই। তাই তাদের পুজোর মধ্যেও রয়ে গিয়েছে প্রাচীনত্বের গন্ধ। এই সব বনেদিয়ানায় ভরা পুজো যে কোনও জাঁকজমকপূর্ণ পূজো প্রদর্শনীকে ম্লান করে দিতে পারে। এমনই কয়েকটি পুজোর কথা জানা যাক।

সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার

এই পরিবার থেকেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সপ্তদশ শতকে সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলকাতা তিনটি গ্রাম অধিগ্রহণ করে যা পরবর্তীতে কলকাতা (বর্তমানে কলকাতা) নামে পরিচিত হয়। েই সাবর্ণ রায়চৌধুরীর প্রতি বছর দুর্গা পূজা উদযাপন করেন। ১৬১০ সাল থেকে এখানে আটচালা প্রতিমায় পুজোে। সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজোকে বলা হয় শহরের প্রাচীনতম পুজো বলা হয়! বড়িশায় অবস্থিত রায়চৌধুরী প্রিবারে ‘দুর্গা দালানে’ পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

রাজা নবকৃষ্ণ দেবের পরিবার

শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা উদযাপন শতাব্দী প্রাচীন। এখানে একটি কাহিনী রয়েছে। বহু বছর আগে বলির জন্য একটি ছাগলছানাকে রাখা হয়েদছিল। আচমকা সে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার করতে করতে মা দুর্গার পায়ের কাছে আশ্রয় নেয়। সেই সময় তখন পরিবারের প্রধান ছিলেন রাধাকান্ত দেব বাহাদুর। তিনি পুরোহিতদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন পাঁঠাবলি দেওয়ার। পরিবর্তে সিঙ্গি মাছ বলি দেওয়া শুরু হয়। ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব যখন রবার্ট ক্লাইভ এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যান্য অফিসারদের সম্মানিত করেছিলেন তখন দেব পরিবারের দুর্গাপূজা সমাজের আলোচনায় পরিণত হয়েছিল। সেই সময় নাচ ঘর থেকে সাধারণত হিন্দু পরিবারের দুর্গা উদযাপন দেখতেন অ-হিন্দুরা। কারণ দেব পরিবারের ঠাকুর দালান বা অভ্যন্তরীণ অংশ সেই সময় এই অ-হিন্দুরা প্রবেশ করতে পারতো না। এই পুজোর খুব আকর্ষণীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিংহের মুখে ঘোড়ার মুখমণ্ডল।

বদন চন্দ্র রায় পরিবার

কলুটোলায় (মধ্য কলকাতা) বদন চন্দ্র রায় পরিবারের বসতবাড়িটি অত্যন্ত বিখ্যাত। কলেজ স্ট্রিটে মেডিকেল কলেজের বিস্তীর্ণ চক্ষু বিভাগটি এই পরিবারের দান করা জমির উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই পরিবারের খিলানযুক্ত ঠাকুর দালানে ১৬০ বছরেরও পুরানো পুজো অনুষ্ঠিত হয়। রায় পরিবার আসলে বৈষ্ণব পরিবার, তাই এখানে পশু বলি প্রথা নেই। পরিবর্তে ফল বলির প্রচলন রয়েছে।

পূর্ণেন্দু চন্দ্র ধর পরিবার

বদন চন্দ্র রায় পরিবারের বাড়ি থেকে খুব দূরেই পূর্ণেন্দু চন্দ্র ধর পরিবারের বাড়ি। এটিও বৈষ্ণব পরিবার। তবে ধর পরিবার অসুর-বধের ভঙ্গিতে দেবী দুর্গার পূজা করেন না। পরিবর্তে, তিনি এখানে অভয়া মা হিসাবে পূজিত হন। তাই উপবিষ্টা প্রতিমার দশটির পরিবর্তে দুটি হাত রয়েছে। পায়ের কাছে দুটি উপবিষ্ট সিংহ। মা তার সন্তানদের দ্বারা বেষ্টিত।

শিবকৃষ্ণ দাঁ পরিবার

উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোতে বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভারের কাছে অবস্থিত। দাঁ বাড়িটি বহু ছবির শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। শিবকৃষ্ণ দাঁ’র বাবা ১৮৪০ সালে পারিবারিক পুজো শুরু করেছিলেন।

রানি রাসমণি পরিবার

মধ্য কলকাতার জানবাজারে অবস্থিত উনিশ শতকে নির্মিত রানি রাসমণির বাড়ি। তিনিই দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রানি রাসমণির মৃত্যুর পরে তাঁর কন্যারা দুর্গাপূজা চালিয়ে যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here