ভগবান বিষ্ণুর বিখ্যাত মন্দিরটি গোরখপুর শহরের মেডিক্যাল কলেজ রোডে অবস্থিত। মন্দিরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এখানে স্থাপিত ভগবান বিষ্ণুর মূর্তির ঠোঁট সারাদিনে তিন ভাবে পরিবর্তিত হয়। মানে ঈশ্বরের হাসি সারাদিন তিন প্রকার। মূর্তিটিতে সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন মূর্তিতে শ্রী বিষ্ণুর দর্শন করেন ভক্তরা।
এই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর প্রতি ভক্তদের গভীর বিশ্বাস রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন ভগবানের দর্শন পেতে। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে ভক্তদের ভিড় হয়। ভগবান বিষ্ণুর এই মূর্তিটি দ্বাদশ শতকের পাল রাজবংশের সময়কার। যে স্থানে মন্দিরটি সেখানে মানুষ আগে পশুপালনের জন্য ঘাস কাটতে আসত। স্থানীয় গোরখ মিস্ত্রী পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে কৃষ্ণবর্ণের শিলাখণ্ড দেখতে পান।
তিনি প্রতিদিন সেই শিলালিপিতে তাঁর খুরপির ধার ধারালো করতেন। একদিন তিনি ভাবলেন এই পাথরটিকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। শিলাটি ঘুরিয়ে তিনি দেখতে পেলেন যে সেটি আসলে একটি বিষ্ণুর মূর্তি। গোরখ মূর্তি পরিষ্কার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি ওই মূর্তি বাড়িতে রাখতে পারেননি। প্রতিবেশী শিব পূজন মিস্ত্রির বাড়িতে গোরখ মূর্তিটি স্থাপন করেন। তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর সিলটের কাছে এই তথ্য আসে। তিনি সেখান থেকে মূর্তিটি তুলে নন্দন ভবনে স্থাপন করেন।
কিছুদিন পর কালেক্টর ১৯১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলার মালখানায় মূর্তিটি স্থাপন করেন। তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর ধরমবীর রায় প্রমুখ ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি নন্দন ভবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিলট মূর্তিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে লখনউ মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেন।
মূর্তিটি ব্রিটিশ অফিসাররা পাহারা দিত। সেখান থেকে এই মূর্তি লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। মাঝৌলি রাজ স্টেটের মহারানি শ্যাম কুমারী যখন এই খবর পেয়েছিলেন, তিনি মূর্তিটি ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তার স্বামী রাজা কৌশল কিশোর প্রসাদ মল্লের স্মরণে অসুরানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন এবং সেখানে মূর্তি স্থাপন করেন।
মন্দিরে স্থাপিত ভগবান বিষ্ণুর কালো (অর্থাৎ কসৌটি) পাথরের মূর্তি খুবই বিরল। দেশে চার হাত বিশিষ্ট কসৌটি পাথরের মাত্র দুটি মূর্তি রয়েছে। একটি তিরুপতি বালাজিতে এবং অন্যটি গোরখপুরের বিষ্ণু মন্দিরে।
মন্দিরের চার কোণে বদ্রী বিশাল, জগন্নাথ, ভগবান দ্বারকাধীশ ও রামেশ্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মন্দির প্রদক্ষিণ করে, ভক্তরা চারটি ধাম দর্শনের ফল পান।