মহামারীর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কোনও এক সময় শুরু হয়েছিল শীতলাপুজো। যুগের পর যুগ পেরিয়েও তাতে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আজও হাম, বসন্ত রোগ থেকে সেরে উঠে পুজো দেওয়া হয় শীতলা মন্দিরে। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শীতলা পূজা। হাওড়ার আন্দুলের মৌরিদাসপাড়ার মহিয়ারি শীতলা মন্দির রয়েছে চক্রবর্তী পরিবারে। অলৌকিক ঘটনা সম্বলিত এই মন্দিরটি নিয়ে শোনা যায় কতশত গল্প।
মহিয়ারির শীতলা মন্দিরে মানত করে সুস্থ হয়েছেন এমন মানুষের অভাব নেই। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভক্তকূল। শুধু মায়ের কাছে নিবেদিত জল দিয়ে পাতুড়িয়া বসন্তের মতো ভয়ানক রোগ সেরেছে এর প্রমাণও রয়েছে। কথাতেই রয়েছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। তাই জাগ্রত মায়ের দর্শন করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা।
মন্দির তৈরি ও পুজোর নেপথ্যে রয়েছে এক অলৌকিক কাহিনি। দুশোবছরেরও বেশি সময় আগে শীতলা মায়ের একটি ছোট্ট মূর্তি পান আট বছরের এক বালিকা। সে মূর্তি তখন নিতান্তই পুতুল তার কাছে। পুতুল নিয়েই বালিকার খাওয়া, পুতুল নিয়েই ঘুমানো, পুতুল নিয়েই খেলা। একদিন সেই বালিকাই পেলেন স্বপ্নাদেশ, মা তাঁকে বললেন, ‘আমি মা শীতলা। আমাকে একটু আলাদা করে রাখ। তোরা যা খাস আমাকেও একটু দিস।” এদিকে মৌরিদাসপাড়া সেই সময় গ্রাম। গ্রামের যিনি জমিদারপত্নী তিনি স্বপ্নাদেশ পেলেন মায়ের থেকেই। জানালেন এক আট বছরের কন্যার খেলার সঙ্গী তিনি। তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করুন জমিদার পত্নী। সেই মতো প্রথমে হল চালাঘর, সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হন মা। তারপর হয় বিশাল মন্দির। সেই সময় রাজবাড়ি থেকে ভোগ পাঠানো হত দেবীকে নিবেদনের জন্য। আজও সেই নিয়ম চলে আসছে। রাজবাড়ির উত্তরপুরুষদের কাছ থেকে নিয়ম মেনে আজও আসে ভোগ। একই রূপে পূজিত হন মা। দুশো বছর ধরে এই রূপেই পুজো পান দেবী।
মৌরিদাসপারার দেবী শীতলা মায়ের পুজোতে হয় ঠান্ডা প্রসাদ। আগের দিন ভাত রান্না করে পরের দিন পান্তা খাওয়া এই পুজোর রীতি। আগে বলিপ্রথা চালু ছিল। চক্রবর্তী পরিবারেরই এক সদস্য সনৎ চক্রবর্তী এই প্রথা বন্ধ করে যান। প্রতি বছর শীতলাপুজোয় কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ আসেন, মায়ের পুজো দেন।