নিয়মকে বুড়ো আঙুল, মহারাজের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করতে কোনও খামতি রাখছে না ‘অযোগ্য’রা

কৌশিক চক্রবর্তী

১৬ ডিসেম্বর, কলকাতা

কেউ দেখে শেখে, কেউ ঠেকে শেখে। কিন্তু সবটার জন্যই শেখার ইচ্ছাটা থাকা প্রয়োজন। এই ইচ্ছেরই চূড়ান্ত অভাব বাংলা ক্রিকেটের ঘরোয়া লিগের ম্যাচ আয়োজনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যাঁরা জড়িত তাঁদের মধ্যে।

কিছুদিন আগেই sportsnscreen খবর করেছিল, হাইকোর্ট মাঠে ম্যাচের দিন মূল পিচের দুই পাশে থাকা পিচে জল দেওয়া নিয়ে। সেই ম্যাচ নির্ধারিত সময় শুরু হলেও অপেশাদারিত্বের পরিচয়  প্রাথমিক ভাবে অসহযোগিতা করেছিলেন ওই মাঠের দায়িত্বে‌ থাকা কিউরেটর সফি আহমদ।

এ বার কার্যত একই রকম চিত্র দেখা গেল দেশবন্ধু পার্কের মাঠে। সুপার লিগের ম্যাচগুলি যাতে বিলম্বিত না হয় সেই কারণে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সক্রিয় সহযোগিতায় এই বছর থেকে প্রথম পিচ কভারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহারাজ সিএবি সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর রাজ্যের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা প্রবল। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যেমন ছিলেন দাপুটে নেতা তেমন-ই দাপুটে প্রশাসক। বিসিসিআই-তেও যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনই নেতৃত্ব দিয়েছেন/দিচ্ছেন সিএবিতেও। কিন্তু মহারাজের পক্ষে সমস্তটা একা করা সম্ভব নয়। ফলে বিভিন্ন দায়িত্ব বিভিন্ন কমিটি’কে ভাগ করে দেওয়া। কিন্তু যাঁদের উপর দায়িত্ব, তাঁরাই যদি অকর্মণ্য হন তা হলে আর কী করার থাকে!

দেশবন্ধু পার্কে সকাল সাড়ে ন’টায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল ইস্টবেঙ্গল এবং তপন মেমোরিয়াল-এর মধ্যে। সেই ম্যাচ শুরু হয় তিন ঘণ্টা পর। মূল পিচ কভার করা থাকলেও পার্শ্ববর্তী দুই পিচে ঢাকা ছিল না। ম্যাচের আগের দিন জল দেওয়া হয় সেই দুই পিচে। পিচ কভার করার ক্ষেত্রে সাধারণত স্কোয়ার অফ দ্য উইকেট বা ৩০ গজের যে বৃত্ত তা কভার করার কথা। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শুধু যে উইকেটে খেলা হবে সেই উইকেট-ই কভার করা হচ্ছে পাশের উইকেটে কভার হচ্ছে না। পাশের উইকেটে আগের দিন জল দেওয়া হচ্ছে যার ফলে দুই দলের খেলোয়াড়, আম্পায়ার, সাপোর্ট স্টাফ এবং ম্যাচ পরিচালনার ক্ষেত্রে যুক্ত যাঁরা, তাঁরা হায়রানির শিকার হচ্ছেন।

এই মাঠের কিউরেটরের দায়িত্বে থাকা চিরঞ্জীব মণ্ডলের বক্তব্য, উইকেট’কে ভাল রাখার জন্য আমরা জল দিয়ে থাকি। কিন্তু প্রশ্নটা এখানেই, ক্রিকেট’কে বাঁচানোর জন্য আইন নাকি আইন’কে বাঁচানোর জন্য ক্রিকেট? কোনটা? খেলা যদি নির্ধারিত সময়ে শুরু না করা যায় তা হলে তার দায় কি এড়াতে পারেন কিউরেটর? যখন মাটির চরিত্রের‌ সঙ্গে পরিচিত এবং ভালমতোই জানেন আগের দিন বিকেলে জল দেওয়া হলে সেই জলের প্রভাব খেলার দিন সকালেও থাকবে তখন কপি-বুক স্টাইল থেকে বেরনো যেত না?

আবারও একই প্রশ্ন উঠে আসছে, কী ভূমিকা গ্রাউন্ডস কমিটির? এই কমিটির চেয়ারম্যান অমিতাভ আড্ডি আদৌ এ সব বিষয় খোঁজখবর রাখেন?

পিচ কভারের প্রাথমিক নিয়মের মধ্যে পড়ে ৩০ গজের বৃত্ত কভার করা, ইনক্লুডিং বোলিং রানআপ। অথচ অধিকাংশ মাঠে দেখা যাচ্ছে যেই উইকেটে খেলা হবে শুধু ওই উইকেট-ই ঢাকা দেওয়া হচ্ছে পাশের পিচে কভার করা হচ্ছে না জল দেওয়ার জন্য। এতে কভার করা আর না করার মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকছে না। কারণ পাশের উইকেটে যদি খেলার আগের দিন জল দেওয়া হয় তা হলে পরের দিন সময় মতো খেলা শুরু হতে পারে না। ফলে বাংলা ক্রিকেট’কে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্যে এবং আগামীর তারকা তুলে আনার যে উদ্দেশ্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের, সেই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপটাই কিউরেটর, গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম সচিব ব্যর্থ করে দিচ্ছেন নিজেদের গাফিলতিতে।

দেশবন্ধু পার্কে খেলা শুরু হওয়ার পরেও পিচের আচরণ যথাযথ ছিল না। প্রথম দিনের খেলায় অধিকাংশই দেখা গিয়েছে অসমান বাউন্স। এই উইকেটে খেলা আর ধান ক্ষেতে খেলা প্রায় একই রকম। কোনও বল মাত্রাতিরিক্ত বাউন্স করছে আবার কোনও বল একেবারেই নীচু থাকছে। এর অর্থ একটাই, হয় পিচ ম্যাচের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, অথবা পিচ তৈরির ক্ষেত্রেই গলদ রয়েছে এবং কিউরেটর চিরঞ্জীব কোনও ভাবেই এর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।

এই অসমান বউন্সের কারণেই তপন মেমোরিয়ালের গৌরব চৌহানের হেলমেটে গিয়ে লাগে গুড লেন্থের একটি বল, বোলার ছিলেন কনিষ্ক শেঠ। অস্বস্তি বোধ করা গৌরবকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে তার এমআরআই করা হয়। যদিও চিকিৎসক জানিয়েছেন ভয়ের কিছু নেই।

সিএবির যুগ্ম সচিব মদনমোহন ঘোষ এবং টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ দে ওরফে বাপি’কে নিয়ে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল। সিএবির যুগ্ম সচিব তবুও নিজে ক্রিকেটটা খেলেছেন কিন্তু এই বাপি কোন যোগ্যতায় টুর্নামেন্ট কমিটির দায়িত্ব পেলেন সেটাও ভাববার। মাঠে তিনি ডুমুরের ফুল, ক্রিকেট কখনও খেলেননি, অথচ বসে রয়েছেন বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে।

ঘরোয়া লিগের ক্রিকেট বাঁচলে তবেই বাঁচবে বাংলা ক্রিকেট। বাংলার ক্রিকেট রক্ষা পেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমান সাহার মতো নক্ষত্র এই রাজ্য থেকে উঠে আসবে ভারতীয় ক্রিকেটের মূল মঞ্চে। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তা ব্যর্থ করতে এই ‘অযোগ্যদের জুড়ি মেলা ভার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here