কান কটকট করলে পেন্সিলের শিস, সেফটিপিন, লোহার ক্লিপ, পাখির পালক ইত্যাদি দিয়ে খোঁচানোর প্রবণতা ভারতীয়দের মধ্যে প্রবল। অতীতে ধাতুর চিমটে নিয়ে কিছু লোক কান পরিষ্কার করার কাজ করতেন। নিয়মিত বাড়ি বাড়ি ঘুরে সর্ষের তেল কানে দিয়ে চিমটে দিয়ে ময়লা বের করে আনতেন। কান পরিষ্কার করতে অনেকে আবার যেখান সেখান থেকে কেনা তুলোর বাড দিয়েও কান পরিষ্কার করে থাকেন। কিন্তু সত্যি বলতে কী, এসব বাডে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা থেকেই যায়। তাই অবহেলা নয়, কান পরিষ্কার করুন যত্ন সহকারে। মেনে চলুন কয়েকটি পরামর্শ।
কানের খোল বা ময়লাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় সেরুমেন। মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কর্ণকুহর থেকে নিঃসৃত একপ্রকার হলুদাভ নিঃসরণ এটি। কর্ণকুহরের বাইরের দিকের এক তৃতীয়াংশের দেওয়ালের পরিবর্তিত এপোক্রিন ঘর্মগ্রন্থি ও সেবাম গ্রন্থির মিশ্রিত ক্ষরণই হল সেরুমেন। এটি কর্ণকুহরের ত্বকের সুস্বাস্হ্য বজায় রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পোকামাকড় এবং জল থেকে কানকে রক্ষা করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ সেরুমেন কর্ণকুহর আটকে দিয়ে কানের পর্দার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্রবণশক্তির হানি ঘটাতে পারে।
কানের ময়লা সাধারণ আঠালো হয়। এই অবস্খায় এটি কান থেকে এমনিই বেরিয়ে যায়। খাবার চিবিয়ে খাওয়ার সময় বা কথা বলার সময় চোয়ালের যে নড়াচড়া হয় তাতেই এই ময়লা বহিঃকর্ণ থেকে বাইরের দিকে চলে আসে। স্বাভাবিক অবস্থায় কানের নরম আঠালো মোম পরিষ্কার করার দরকার পরে না। কারণ এটি এমনিতেই বের হয়ে যায়। তাছাড়া এটি কোনও সমস্যাও করে না। তবে এই ময়লা অনেক সময় শক্ত হয়ে পড়ে এবং তখন সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে যাঁদের ত্বক শুষ্ক হয় তাঁদের কানের ময়লা শক্ত হয়ে যেতে পারে। যাঁদের মাথায় খুশকি থাকে তাঁদের কানেও প্রচুর ময়লা জমে। সামান্য কিংবা অতিরিক্ত শক্ত ময়লা কানে জমে কানে ব্যথা হয়।
- মাসে একবার অল্প উষ্ণ জলে অর্ধেক চামচ বেকিং সোডা গুলে নিন। সেই জলের এক ফোঁটা ড্রপারে করে কানের গর্তের কাছে ফেলে দিন। ঘাড় কাত করে ভিতরে দিকে অল্প করে জল প্রবেশ করতে দিন। এভাবে দিনের মধ্যে বিভিন্ন সময় চার পাঁচ বার করলে কানের শক্ত ময়লা নরম হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে।
- হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে কান পরিষ্কারের কথাও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ ফোঁটা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কানে ঢেলে ঘাড় কাত করতে হয়। কিছুক্ষণ হালকা করে মাথা ঝাঁকাতে হয়। ধীরে ধীরে কানের ময়লা নরম হয়ে যায়। এরকম দিনে একবার করলেই হয়।
- কানের শক্ত ময়লা নরম করতে পারেন তেল দিয়ে। বেবি অয়েল, নারকেল তেল, গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল দিয়ে কান পরিষ্কার করা যায়। এক্ষেত্রে কানে দু ফোঁটা তেল দিয়ে ঘাড় কাত করে রাখুন। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখবেন কানের ময়লা বেরিয়ে আসছে।
- কান পরিষ্কার করতে মেডিকেটেড ইয়ারবাড ব্যবহার করুন। তবে ইয়ারবাড যেন কানের গভীরে ঢুকিয়ে দেবেন না।
- কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, একটি পরিষ্কার সুতির কাপড় গরম জলে ভিজিয়ে আলতো করে কানের উপর রাখুন। তাপ কানের ভিতরে জমাট বেঁধে থাকা ময়লা নরম করতে সাহায্য করবে। ফলে তা নিজে থেকেই বেরিয়ে আসবে।
- ঘরোয়া উপায়ে কান পরিষ্কার করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল লবণ জল। এতে খুব সহজেই কানের ময়লা পরিষ্কার হবে। হালকা গরম জলের সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে কানে দিন। এরপর মাথা কাত করে কয়েক মিনিট রাখুন। সহজেই ময়লা নরম হবে।