
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বর্তমানে নারীদের কমান্ডার পদে কর্মরত। একটা সময় কিন্তু এমন ছিল না। বহু কাঠখড় পোরাতে হয়েছে নারীদের সেনাবাহিনীতে আসতে। অথচ বহু বছর আগে পরাধীন ভারতে নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফঊজে গড়ে উঠেছিল ঝাঁসির রানি বাহিনী তাও আবার এক মহিলার নেতৃত্বে। এটি ছিল মহিলা পদাতিক যুদ্ধ ইউনিট।
১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে গঠিত হয় ঝাঁসির রানি বাহিনী। সেই সময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতীয় নারীদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগালের নেতৃত্বে সমস্ত বয়সের মেরয়েদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই বাহিনী।
ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মহিলা ছিলেন যারা ভারত থেকে প্রতিবেশী দেশে চলে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র ঝাঁসির রানি বাহিনীতে যোগ দিতে। আর প্রবাসী ভারতীয় মহিলারা তো ছিলেনই। তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো তখনও ভারতে পা রাখেননি, তবুও দেশসেবার আকাঙ্ক্ষায় তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগল বলেছিলেন কেন নেতাজি মহালা রেজিমেম্নটের নাম ঝাঁসির রানি বাহিনী রেখেছিলেন। তাঁর কথায়, “নেতাজি আমাদের বলেছিলেন যে তিনি রেজিমেন্টের জন্য ‘ঝাঁসির রানি’ নামটি বেছে নিয়েছিলেন কারণ নেতাজি একজন ইংরেজ লিখিত একটি নিবন্ধ পড়েছিলেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের তিনি লিখেছিলেন যে ‘রানির মতো হাজার হাজার মহিলা থাকলে আমরা কখনই থাকতে পারতাম না।”
ঝাঁসি রেজিমেন্টের রানিকে কখনওই ফ্রন্টলাইনে পাঠানো হয়নি, এই কারণেই হয়তো ঐতিহাসিক বর্ণনায় তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, মহিলাদের এমন সাহস ছিল যে একজনও রেজিমেন্ট ত্যাগ করেননি। অনেক আইএনএ অফিসার এবং ব্রিটিশ সেনা অফিসার এই বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ঝাঁসির রানি বাহিনীর অসংখ্য সাহসী নারীর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম জানকী থেভার। ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরী নেতাজির কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে আইএনএ-তে যোগদান করেন। তিনি তার গয়না বিক্রি করে দেন, বিয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করে এসেছিলেন। হয়েছিলেন ঝাঁসির রানী বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ কমান্ডার। ১৯৪৪ সালে, জানকী থেভার লক্ষ্মীর কাছ থেকে কম্যান্ড গ্রহণ করেন। বার্মার রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি।
রেঙ্গুনের রেড ক্রস হাসপাতালে বোমা হামলার সময় জানকী থেভার আহত সৈন্যদের ঘটনাস্থল থেকে দূরে নিয়ে যান। যুদ্ধের পরে তিনি বেশ কয়েকটি মহিলা সংগঠনের অংশ হয়ে ওঠেন এবং এমনকি মালায় ভারতীয় কংগ্রেসের মেডিকেল মিশনে যোগদান করেন।
২০০০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে। জানকী থেভার ভারতের বাইরে বসবাসকারী প্রথম মহিলা যিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।