পঞ্চম বেদ নামে পরিচিত মহাভারতের গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র শকুনি, যাকে এই মহাযুদ্ধের জন্য দায়ী মনে করা হয়। শকুনি গান্ধার রাজ্যের একজন রাজা ছিলেন, যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন বোন গান্ধারির শ্বশুরালয় হস্তিনাপুরে। শকুনির বোন গান্ধারীর বিয়ে হয়েছিল ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে। তিনি ছিলেন হস্তিনাপুরের রাজা ধৃতরাষ্ট্রের ভগ্নিপতি এবং কৌরবদের মামা।
শকুনি সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি পাশা খেলায় কখনও হারেননি। তাঁর বিজয়ের রহস্য লুকিয়ে ছিল এই পাশার মধ্যেই। শকুনিই দুর্যোধনের মনে পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষের বীজ বপন করেছিলেন এবং এমন পাশা খেলেছিলেন যে পাণ্ডবরা তাতে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন। এই খেলার পর কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে মহাভারতের মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাতে কুরু রাজবংশ ধ্বংস হয়। কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে কৌরবরা যে পরাজিত হবে তা শকুনি ভাল করেই জানতেন, এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগে কেন শকুনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই সব করলেন?
মহাভারত বারবার শকুনিকে খলনায়ক প্রতিপন্ন করার চেষতা করলেও আসলে তিনি প্রথম থেকেই খল মনের ছিলেন না। শকুনি বোন গান্ধারীকে খুব স্নেহ করতেন এবং বিশ্বের প্রতিটি ভাইয়ের মতো তিনিও চেয়েছিলেন যে তার বোনেরও যেন একজন উপযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়। বোন যাতে চির সুখী হয়। মামা শকুনি তাঁর বোনের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার পিছনে একটি কিংবদন্তি রয়েছে, যে অনুসারে শকুনি কখনওই তাঁর বোন গান্ধারীকে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সাথে বিয়ে দিতে চাননি কিন্তু ভীষ্মের চাপের কারণে তা করতে বাধ্য হন। এর প্রতিশোধ নিতে তিনি এই পুরো ষড়যন্ত্র করেছেন। যে পাশার সাহায্যে তিনি এই কুরুক্ষেত্রের ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ঘটিয়েছিলেন তার গল্পটি বিস্ময়কর।
বিয়ের পর গান্ধারীর সাথে সম্পর্কিত একটি সত্য জানতে পেরে ধৃতরাষ্ট্র এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে তিনি গান্ধার রাজ্য আক্রমণ করেন এবং শকুনির পুরো পরিবারকে বন্দি করা হয়। কারাগারে বন্দি সকলকে এত কম খাবার দেওয়া হয়েছিল যে তারা ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যেতে থাকে। এমতাবস্থায় শকুনির বাবা সিদ্ধান্ত নেন তিনি কনিষ্ঠ পুত্রের জীবন বাঁচাবেন। এই কনিষ্ঠ পুত্রটিই ছিলেন শকুনি। তিনি ছিলেন গান্ধার রাজের সকল সন্তানদের মধ্যে বুদ্ধিমান। তাই রাজা সবার ভাগের খাবার থেকে খাবার বাঁচিয়ে শকুনিকে খাওয়াতে থাকেন। ভবিষ্যতে গান্ধার রাজ্যের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি এই কাজ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত শকুনিকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু তিনি যেন নিজের প্রতিজ্ঞা ভুলে না যান এটা মনে করানোর জন্য তাঁর একটি পা খোঁড়া করে দেওয়া হয়।
শকুনির বাবা যখন বন্দিশালায় মারা যান তার আগে তিনি ছেলেকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন যে ছেলে যেন বাবার হাতের আঙ্গুল দিয়ে পাশা বানায়। এই আঙ্গুল এতটাই ক্রোধে পরিপূর্ণ থাকবে যে কেউ কোনওদিন পাশা খেলায় শকুনিকে হারাতে পারবে না। আর বাস্তবেও তাই ঘটেছিল।