বিশ্বের তাবড় তাবড় স্বৈরাচারীর মধ্যে দেখা গিয়েছিল অদ্ভুত কিছু আচরণ। এই স্বৈরাচারীদের মধ্যে অ্যাডল্ফ হিটলার থেকে শুরু করে জোসেফ স্ট্যালিন বা মাও জে দং সকলেই রয়েছেন। ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের রাজদূত থাকা রাজীব ডোগরা স্বৈরাচারীদের জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তাঁদের বেশ কিছু অদ্ভুত আচরণের উল্লেখ করেছেন প্রাক্তন এই আইএফএস অফিসার।
রাজীব তাঁর লেখা ‘অটোক্র্যাটস— ক্যারিশ্মা, পাওয়ার অ্যান্ড দেয়ার লাইভস’ বইতে রোমানিয়ার শাসক নিকোলাই চশেস্কুর উদাহরণ দিয়েছেন। রাজীবের দাবি, রোমানিয়ার আমজনতার মধ্যে সর্ব ক্ষণ একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করত। তাঁদের বেশির ভাগই মনে করতেন, চশেস্কুর লোকজন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। যার জেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথাও যেতে ভয় পেতেন তাঁরা।
মনরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে স্বৈরাচারীদের নিষ্ঠুর স্বভাবের নেপথ্যে তাঁদের শৈশবের বড় ভূমিকা রয়েছে। লেভিন রেড্ডি ও অ্যাডাম জেমস তাঁদের ‘থার্টিন ফ্যাক্টস অ্যাবাউট বেনিটো মুসোলিনি’ বইয়ে এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। রেড্ডি-জেমস লিখেছেন, মুসোলিনির অনুশাসনে আনতে মা-বাবা তাঁকে একটি ক্যাথলিক বোর্ড স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।
মাত্র ১০ বছর বয়সে এক সহপাঠীর উপর ছুরি নিয়ে চড়াও হন তিনি। ফলে তৎক্ষণাৎ স্কুল থেকে বিতড়িত হন এক সময়ের ইটালির সর্বময় কর্তা। নিজের এক প্রেমিকাকেও ছুরি দিয়ে কোপাতে হাত কাঁপেনি তাঁর। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ‘দ্য নিউ স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় ইতিহাসবিদ সিয়ো প্রোডোর একটা উত্তর সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। যার নাম ছিল, ‘ডিক্টেটরস: দ্য গ্রেট পারফরমার্স’। সেখানে তিনি লিখেছেন, ১৯২৫ সালে তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য স্কুলে স্কুলে বিনামূল্যে ৪০ হাজার রেডিও বিলি করেছিলেন মুসোলিনি।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আট লক্ষ। ওই সময়ে মুসোলিনির ভাষণ শোনার জন্য রাস্তার চৌমাথায় বড় বড় লাউডস্পিকার লাগানো হয়েছিল। সাবানের উপর ছিল তাঁর ছবি। এ ছাড়া নিজের দফতরের আলো সারা রাত জ্বালিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুসোলিনি। তিনি যে সর্ব ক্ষণ দেশের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, তা বোঝাতে চেয়েছিলেন ইটালির প্রাক্তন স্বৈরাচারী শাসক।
বলশেভিক পার্টির সাম্যবাদী আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল টাকার। যা জোগাড় করতে রুশ ধনী ব্যবসায়ীদের অপহরণের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল, ইয়োসেব বেসারিয়নিস ডিজে জুগাশভিলি।
লাখো লাখো ইহুদি হত্যার কুচক্রী জার্মান ‘ফ্যুয়েরার’ হিটলার আবার ছিলেন পুরোপুরি নিরামিশাষী। জীবনের শেষ দিকে শুধুমাত্র সুপ ও পেষাই করা আলু খেতেন তিনি। তবে ফুড টেস্টারেরা পরখ না করলে খাবার মুখে তুলতেন না হিটলার। সর্ব ক্ষণ বিষ প্রয়োগে খুনের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াত তাঁকে।
উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার কিম জং ইল হাঙর আর কুকুরের মাংসের সুপ খেতেন চেটেপুটে। ডেমিক বার বার লিখেছেন, খাবার পরিবেশনের আগে তাঁর প্রমীলা বাহিনী তা চেখে দেখত। প্রতিটা ভাতের কণা সমান ও একই রঙের রয়েছে কি না, তা ভাল করে পরীক্ষা করতেন তাঁরা।
কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পল পটের আবার পছন্দ ছিল গোখরো সাপের মাংস। তাঁর রাঁধুনি রাজীব ডোগরাকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা সাপ মেরে তা বাগানে ঝুলিয়ে রাখতাম। পরে মাথা কেটে সরীসৃপগুলির রক্ত হোয়াইট ওয়াইনের সঙ্গে মিশিয়ে খেতাম। শেষে সাপটাকে কুচি কুচি করে কেটে সেই মাংস রান্না করে প্রধানমন্ত্রীকে পরিবেশন করা হত।’’
উগান্ডার সেনাশাসক ইদি আমিনের বিরুদ্ধে নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর খাদ্যাভাসের বিষয়টি ‘ডিক্টেটরস উইথ স্ট্রেঞ্জ ইটিং হ্যাবিটস’ শীর্ষক একটি লেখায় তুলে ধরেন সাংবাদিক অনিতা সুরিউইচ। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে আমিন বলেছিলেন, ‘‘আমি নরমাংস খুব একটা পছন্দ করি না। কারণ, ওটা নোনতা। স্বাদে আহামরি কিছু নয়।’’
চিনের চেয়ারম্যান মাও আবার আজীবন দাঁত ব্রাশ করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জিসুই লি-র লেখা ‘প্রাইভেট লাইফ অফ চেয়ারম্যান’ মাও থেকে জানা যায়, এর জন্য তাঁর মাড়িতে পাথর জমে গিয়েছিল। এই নিয়ে কথা উঠলেই মাও বলতেন, ‘‘বাঘ-সিংহ কখনওই তাদের দাঁত পরিষ্কার করে না।’’
মায়ানমারের সেনাশাসক জেনারেল নে উইনের আবার ছিল জুয়ো ও গল্ফের নেশা। খুব দ্রুত রেগে যেতেন তিনি। ডোগরা আরও জানিয়েছেন, জ্যোতিষে মারাত্মক বিশ্বাস ছিল উইনের। একবার এক গণক তাঁকে বলেন, ৯ সংখ্যাটি তাঁর জন্য শুভ। সঙ্গে সঙ্গে ১০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেনারেল নে। বদলে ৯০ টাকার নোট চালু করতে জারি হয় বিজ্ঞপ্তি।