ভারতের বৈচিত্র্য ও ঐক্য সারা বিশ্বকে তার দিকে আকৃষ্ট করে। প্রাচীন ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, বিভিন্ন ধর্ম ও ভাষার সৌন্দর্য এদেশের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কোথাও বিস্তীর্ণ সাগর, কোথাও সুউচ্চ তুষার পর্বত, কোথাও ঘন অরণ্য, কোথাও দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকা মরুভূমি, কোথাও সমতল ভূমির সৌন্দর্য আবার কোথাও পাথরের আকর্ষণ প্রকৃতির এমন রঙ একসঙ্গে খুব কমই কোনও দেশে দেখা যায়। ভারত সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য রয়েছে, যা সারা বিশ্বকে তার দিকে আকৃষ্ট করে। এখানে আমরা শুধুমাত্র সেই কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে যাচ্ছি, যার কারণে বিশ্বের অনেক দেশ ভারতকে বিশ্বাস করে।
১. ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। এর মোট আয়তন ৩.২৮ মিলিয়ন বর্গ কিমি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ দেশে বাস করে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র হিসাবে বিখ্যাত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯১১ মিলিয়ন।
২. সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভাষা রয়েছে ভারতে। এদেশে সরকারি ভাষার সঙ্গখ্যা ২২টি। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে সরকারি ভাষার তালিকা রয়েছে। এখানে প্রথমে ১৪টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ২১ তম সংশোধনীর পরে ১৯৬৭ সালে সিন্ধ্রি ভাষা যুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে ৭১ তম সংশোধনীর মাধ্যমে কোঙ্কনি, মেইতি (মণিপুরি) এবং নেপালি ভাষাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আরও চারটি ভাষা – বোড়ো, ডোগরি, মৈথিলি এবং সাঁওতালি – ২০০৩ সালে ৯২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছিল। ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার মধ্যে – অহমীয়া, বাংলা, বোড়ো, ডোগরি, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কানি, মৈথিলি, মালয়ালম, মারাঠি, মেইতি, নেপালি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু, উর্দু অন্তর্ভুক্ত।
৩. দাবা খেলাটি ভারতে উদ্ভাবিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনামলে দাবা ভারতের একটি জনপ্রিয় খেলা ছিল। ভারত থেকে এই খেলা তারপর আরব এবং তারপর ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
৪. যোগ অনুশীলনের ইতিহাস প্রাক-বৈদিক যুগের। এটা বিশ্বাস করা হয় যে যোগের উদ্ভব হয়েছিল ভারতে ৫০০০ বছর আগে। বেদ ও উপনিষদেও যোগের উল্লেখ আছে। হিন্দু লোককাহিনিতে ভগবান শিবকে প্রথম যোগী বা আদিযোগী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
৫. ভারতের বনাঞ্চলে বাঘের সংখ্যা প্রায় ২৯৬৭। এই দেশে বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাঘ রয়েছে এবং তাদের সংখ্যাও দেশে দ্রুত বাড়ছে। ২০১৮ সালের ব্যাঘ্র শুমারি রিপোর্ট অনুসারে, গত ১২ বছরে ভারতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০০৬ সালে বাঘের সংখ্যা প্রায় ১৪১১ ছিল।
৬. ভারত চারটি ধর্মের জন্মস্থান – হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্ম। এই ধর্মগুলির উৎপত্তি ভারতে। শুধু তাই নয়, এখন বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশও এই ধর্মগুলিকে অনুসরণ করে। জৈন ধর্ম খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে। শিখ ধর্মের ইতিহাস ১৫ শতকে ফিরে আসে, যখন এটি গুরু নানক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৭. ভারত বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ মশলা উৎপাদনকারী। ইন্ডিয়া ভারত প্রায় ৭৫ ধরণের মশলা উৎপাদন করে। এ ছাড়া দেশটি মশলার সবচেয়ে বড় ভোক্তা ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশসহ অনেক দেশে মশলা রপ্তানি করে।
৮. ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প এমন একটি শিল্প যেখানে প্রতি বছর সর্বাধিক সংখ্যক চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প। ভারত প্রতি বছর হিন্দি এবং আঞ্চলিক ভাষায় ১৫০০ থেকে ২০০০টি চলচ্চিত্র তৈরি করে।
৯. ভারতই একমাত্র অ-ইসলামিক দেশ যেখানে ৩,০০,০০০টিরও বেশি সক্রিয় মসজিদ রয়েছে। এই দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ রয়েছে। অনেক ইসলামিক দেশেও ভারতের তুলনায় মসজিদের সংখ্যা কম।
১০. আয়ুর্বেদের উদ্ভব ভারতেই। বৈদিক যুগে ভারতে আয়ুর্বেদের উদ্ভব হয়েছিল বলে কথিত আছে।