দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো। আর হাতে গোনা কয়েকদিন। থিম পুজো থেকে বনেদি বাড়ি পুজো- শারদোৎসবে এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। তবু বনেদি বাড়িগুলিতে যেন পুজোর স্বাদ পাওয়া যায়। থিম পুজোয় সবই যেন দেখনদারি। বাংলার বহু জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ি সহ একাধিক বনেদি বাড়িতে নিষ্ঠা সহকারে, শাস্ত্রীয় মতে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়| যেমন কলকাতার ছাতু বাবু লাটু বাবুর বাড়ির পুজো|
আজকের বিডন স্ট্রিটে রয়েছে একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা যার পোশাকি নাম রামদুলাল নিবাস। বাংলার প্রথম লাখপতি রামদুলাল দে এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। সাহেবদের আমলে তাঁর ছিল রফতানির ব্যবসা। সেই ব্যবসা করেই প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন রামদুলাল।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে ঠাকুমার সাথে কলকাতায় আসেন রামদুলাল সরকার। শোনা যায়, তাঁর ঠাকুমা হাটখোলা দত্তবাড়ির রাঁধুনি ছিলেন। হাটখোলা দত্ত পরিবারের সদস্য মদনমোহন দত্ত ছিলেন একজন জাহাজ ব্যবসায়ী। তাঁর কাছে কাজ করতেন রামদুলাল। সততার পুরস্কার হিসাবে মদনমোহনের কাছ থেকে পাওয়া এক লক্ষ টাকা তাঁকে রাতারাতি ধনী ব্যবসায়ীতে পরিণত করে।
তাঁর অবর্তমানে তাঁর দুই পুত্র আশুতোষ দেব ওরফে ছাতুবাবু এবং প্রমথনাথ দেব ওরফে লাটুবাবু বাড়ির দুর্গাপুজো চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৭৮০ সালে রামদুলাল সরকার প্রথম পারিবারিক দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। দূর্গাপুজো উপলক্ষে প্রায় গোটা কলকাতা একসময় আতিথ্য পেত দে বাড়ির। যাত্রা থেকে নাচ, নাটক কী হত না!
লাটু ব্বু ছাতু বাবুর পরিবারে রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো| ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয়। তৃতীয়াতে দেবী বসেন আসনে। এই পরিবারে শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব তিন মতেই পুজো হয়| মহাময়ার পাশে লক্ষ্মী সরস্বতীর পরিবর্তে থাকেন দুই সখী জয়া-বিজয়া| যথাযথ আচার মেনে হয় কুমারী পুজো। এখানে সিংহ অশ্বমুখী। প্রতিমার ডানদিকে হরপার্বতী এবং বামদিকে রামচন্দ্রের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
আগে বলির সময় পাঁঠা বলি দেওয়া হত। একবার পাঁঠাটি বলির আগে ছুটে চলে আসে সামনে দাঁড়ানো রামদুলাল দের কাছে। সেই থেকে এই পুজোয় পাঁঠাবলি হয় না, পরিবর্তে আঁখ, চালকুমড়ো, শসা বলি হয় পুজোর তিন দিন|
দে পরিবারের মহিলারা অষ্টমীতে সিঁদুর খেলেন। দশমীতে এখানে সিঁদুরখেলা হয় না। দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখির পরিবর্তে এখন ওড়ানো হয় পায়রা।