ভারতে সিনেমা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। বলিউড সিনেমার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কয়েক দশকের পুরনো। আজ হয়তো ওটিটির যুগ, কিন্তু সিনেমা দেখার আসল মজাটা আসে প্রেক্ষাগৃহে। সিনেমা হলের প্রতি আমাদের এই ভালবাসাই আজ আমাদের সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে মাল্টিপ্লেক্সের যুগে নিয়ে এসেছে। আজও দেশে এমন অনেক সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল রয়েছে যেগুলোর বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। কিন্তু আজ এই মাল্টিপ্লেক্স সিনেমার যুগে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। আজ আমরা আপনাকে ভারতের প্রথম সিনেমা হল চ্যাপলিন সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি, যেটি স্বাধীনতার আগে ভারতে তৈরি হয়েছিল।
ভারতের প্রথম সিনেমা হলের নাম ছিল এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেস। এটি ১৯০৭ সালে কলকাতায় জামশেদজি ফ্রামজি মদন দ্বারা শুরু হয়েছিল। যদিও পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মিনার্ভা সিনেমা’। তখন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমারের বাবা সিনেমা হলে প্রজেক্টর চালাতেন। তখন সিনেমা হলগুলিতে দর্শকদের জন্য হলিউড সিনেমা চালানো হত। এছাড়া ভারতে তখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, এমন পরিস্থিতিতে অনেক নির্বাক চলচ্চিত্রও এইসব সিনেমা হলে দেখানো হত।
কলকাতার চৌরঙ্গীতে অবস্থিত সিঙ্গেল স্ক্রিন থিয়েটার ‘মিনার্ভা’ সেই সময়ে খুব বিখ্যাত ছিল। ১৯১৩ সালে ভারতের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ র প্রিমিয়ার কলকাতার ‘মিনার্ভা’কে আরও বিখ্যাত করে তোলে। ১৯৩০ সালের মধ্যে, এই সিনেমা হলটি সারা দেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এর পরে, ১৯২৫ সালে চেন্নাইতে শ্রী কৃষ্ণ ট্যুরিং টকিজ, ১৯৩২ সালে দিল্লিতে রিগাল সিনেমা, ১৯৩৪ সালে দিল্লিতে রিটজ সিনেমা এবং পিভিআর রিভোলি স্থাপিত হওয়ার পর ভারতে প্রচুর সংখ্যক চলচ্চিত্র তৈরি হতে শুরু করে।
সাতের দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই মিনার্ভাকে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। অন্য অনেক সিনেমা হল তৈরি হওয়ার পর ধীরে ধীরে ‘মিনার্ভা’ মানুষের পছন্দের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আটের দশকে, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এই জরাজীর্ণ সিনেমা হলটির সংস্কার করে এবং নয়া নাম দেয় ‘চ্যাপলিন সিনেমা’। কিছু বছর চ্যাপলিন চলে রমরমিয়ে। কিন্তু নয়ের দশকের শেষ দিকে ভারতে মাল্টিপ্লেক্স চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘চ্যাপলিন সিনেমা’-র আবার খারাপ পর্ব শুরু হয়। একসময় এটি বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে প্রায় ১০০ বছর ধরে মানুষকে বিনোদন দিয়ে চলা মিনার্ভা ওরফ চ্যাপলিনকে ২০১৩ সালে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ভেঙে ফেলে।