
সময়টা ১৯৪৫ সালের ২ মে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান। সেখানে এক সাংবাদিক জানতে চান জার্মানির নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার ও ইতালির নেতা বেনিতো মুসোলিনির মৃত্যুর প্রসঙ্গে।
জবাবে ট্রুম্যান বলেন, ‘এ দুই প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।’ তখন ওই সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এর মানে আমরা সরকারিভাবে জানতে পারছি, হিটলার মারা গেছেন?’ জবাবে ট্রুম্যান ছোট্ট করে শুধু বলেন, ‘হ্যাঁ’। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, হিটলার আর বেঁচে নেই।
হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল। তাঁর জাত্যাভিমান ছিল প্রবল। হিটলার মনে করতেন জার্মানরা আর্য জাতির বংশধর, তাই তারা সব জাতির সেরা।
হিটলারের জন্মও এপ্রিলে। অস্ট্রিয়ায় জন্ম হওয়া হিটলার সুবক্তা ছিলেন। দেখতে ছোটখাটো হলেও বিশেষ এই গুণ রাজনীতিতে তাঁকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছিল। হিটলার ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর হন। পরের বছর নিজেকে ‘ফুয়েরার’ বা সর্বোচ্চ নেতা ঘোষণা করেন তিনি।
১৯৩৯ সালে হিটলারের হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ায় জার্মানি। সঙ্গে ছিল মিত্র ইতালি ও জাপান। তাদের অক্ষশক্তি বলা হতো। প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জোট মিত্রপক্ষ নামে পরিচিত। এই বিশ্বযুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা দেখে বিশ্ববাসী। ইহুদি নিধনে হিটলারের নৃশংসতা এখনো ভয় জাগায়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিটলার বা মুসোলিনি—কারও পরিণতি সুখকর হয়নি। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে ও ১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে যুদ্ধে চরম কোণঠাসা হয়ে পড়ে অক্ষশক্তি। হিটলার ও মুসোলিনি বুঝতে পারেন পরাজয় অনিবার্য। ইতালির পতন হলে পালানোর চেষ্টা করেন ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনি। তাঁকে আটক করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দিনটি ছিল ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল।
বন্ধু মুসোলিনির করুণ পরিণতিতে শিউড়ে ওঠেন হিটলার। তখন তিনি বার্লিনে নিজের সদর দফতরের ২৫ ফুট নীচে বাঙ্কারে জীবন কাটাচ্ছেন। ওই বাঙ্কারে ১৮টি কক্ষ ছিল। জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহে নিজস্ব ব্যবস্থাও ছিল সেখানে। বাঙ্কারে হিটলারের সঙ্গী ছিলেন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মন্ত্রী ও রক্ষী। মুসোলিনির মতো দুর্ভাগ্য বরণ করতে চাননি তিনি।
কিন্তু শেষরক্ষা হবে না বুঝতে পেরে আত্মহত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন হিটলার। ৩০ এপ্রিল দুপুরে বাঙ্কারের মধ্যেই নিজের কপালের ডান পাশে গুলি করেন তিনি। কেউ কেউ বলেন নিজেকে গুলি করার আগে বিষ মৃতুর আগে হিটলার আর ইভা তাঁদের প্রিয় কুকুরকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করেন। তারপর নিজেদের বাঙ্কারে প্রবেশ করার পর দরজা আটকে দেন দুজনে। এরপর হাতে হাত রেখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেন। তখন হিটলারের বয়স ৫৬ বছর। ইভার ৩৩।