
ভারতবর্ষের অন্যতম জাগ্রত শিবমন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম হল তারকেশ্বর মন্দির। মনে করা হয়, এই মন্দিরে মানত করে শুদ্ধ মনে ভোলানাথের পুজো করলে মনস্কামনা নিশ্চিত রূপে পূরণ হয়। তাই দূর দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভক্তের আনাগোনা লেগেই থাকে।
ইতিহাস এবং পৌরাণিক বিশ্বাস থেকে বলা হয়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে হুগলী জেলার রামনগর অঞ্চলে বিষ্ণুদাস নামে এক স্থানীয় ক্ষত্রিয় রাজা রাজত্ব করতেন, রাজার ভাই ভারামল্ল ছিলেন সংসারবিবাগী যোগী। তখন তারকেশ্বরের নাম ছিল তাড়পুর। ভারামল্ল বনে ফলমূল ও মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায়ই লক্ষ্য করতেন একটি বড় কালো রঙের শিলাখণ্ডের ওপর গাভীরা এসে দুগ্ধবর্ষণ করে। এই ঘটনার কথা ভারামল্ল দাদাকে বলেছিলেন একথা। শিবভক্ত বিষ্ণুদাস বনে এসে এই দৃশ্য দেখে শিহরিত হন।
রাজা ভারামল্ল তখন ঐ শিলাস্তম্ভকে শিবলিঙ্গরূপে রামনগরে এনে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। কিন্তু অনেক মাটি খুঁড়েও পাথরের মূল খুঁজে পাওয়া গেল না। শোনা যায়, এরপর কোনও এক রাতে রাজার ভাই ভারামল্ল স্বপ্ন দেখলেন, স্বয়ং শিব তাঁকে জানাচ্ছেন যে, তিনি তারকেশ্বর শিব। তিনি ওই বন থেকে গয়া ও কাশী পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছেন। তাই তাঁকে তাড়পুরের জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ না করে ওখানেই প্রতিষ্ঠা করা হোক।
এরপর স্বপ্নাদিষ্ট ভারামল্ল ও মুকুন্দরাম রাজার সহযোগিতায় বন কেটে পরিষ্কার করে তাড়পুরেই পাথরের স্তম্ভের উপর একটি মন্দির নির্মাণে ব্রতী হলেন। মুকুন্দ ঘোষকে শিবের সেবা পুজো করবার ভার অর্পণ করা হয়। তিনিই হলেন তারকনাথের প্রথম সেবক।
মুকুন্দরামের মৃত্যুর পর ভারামল্ল ১৭২৯ খ্রিস্টাব্দে তারকেশ্বর মঠের প্রতিষ্ঠা করেন। মঠের মোহন্ত নির্বাচিত হন দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের মায়াগিরিকে। পরবর্তীতে মায়াগিরির হাতেই মঠের দায়িত্বভার তুলে দেয় রাজা ভারামল্ল।