হনুমানকে বালব্রহ্মচারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি সম্পূর্ণ সত্য, তবে হনুমানজি যে অবিবাহিত ছিলেন তা কিন্তু নয়। হনুমানকে সম্পূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান ও মন্ত্রপাঠের  মধ্য দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর একটি পুত্রও ছিল, কিন্তু বিবাহ এবং পুত্র লাভের মধ্যে কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই। তাই বিয়ে করে পিতা হওয়ার পরেও সংকটমোচনকে ব্রহ্মচারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

কথিত রয়েছে, হনুমান যখন তার গুরু সূর্যদেবের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন, সমস্ত শিক্ষা গ্রহণের পরেও একটি শিক্ষা নেওয়া বাকি ছিল তাঁর। সমস্যা ছিল যে এই শিক্ষা অবিবাহিত ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না, শুধুমাত্র বিবাহিতরাই এই শিক্ষা লাভ করতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে, হনুমানের জন্য একটি দ্বিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শিষ্যকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখে সূর্যদেব হনুমানকে বললেন, তুমি আমার কন্যা সুবর্চলাকে বিয়ে কর। এরপর আচার-অনুষ্ঠান ও বৈদিক মন্ত্রের মাধ্যমে হনুমানজির বিয়ে সম্পন্ন হয়।

পরাশর সংহিতা অনুসারে, হনুমান আজীবন ব্রহ্মচারী থাকার ব্রত নিয়েছিলেন এবং অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সুবর্চলা ছিলেন তপস্বিনী। ফলে সূর্যপুত্রী বিয়ের পর তপস্যায় পুনরায় রত হন। অন্যদিকে হনুমান বিয়ের শর্ত পূরণ করলেও গার্হস্থ্যজীবনে না থেকেও পরবর্তী শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

অন্ধ্রপ্রদেশের খাম্মাম জেলায় হনুমানজির একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে সংকটমোচনেরর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর মূর্তিও প্রতিষ্ঠিত। এখানে হনুমানজি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ভক্তদের দর্শন দেন। এই মন্দিরটিকে বজরংবলীর বিবাহের একমাত্র সাক্ষী হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয়, যে দম্পতিরা হনুমানজির এই মন্দিরে আসেন এবং সস্ত্রীক পবনপুত্রের দর্শন করেন, তাদের বিবাহিত জীবনে চলমান সমস্যা দূর হয়।

এই নিবন্ধ পড়ার পর প্রশ্ন ওঠে হনুমানজি যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে গার্হস্থ্য জীবন যাপন  করেননি তাহলে তিনি কিভাবে বাবা হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় বাল্মীকি রামায়ণে। হনুমানজি যখন লঙ্কা দহন করছিলেন, তখন প্রবল অগ্নির তাপে বজরংবলীকে লঙ্কা নগরী থেকে উচ্চ শিখার কারণে হনুমান জি ঘামতে শুরু করেছিলেন।

লেজের আগুন নেভানোর জন্য হনুমান যখন সমুদ্রে পৌঁছালেন, তখন একটি মাছের মুখে সংকটমোচনের দেহ থেকে ঝরে পড়া ঘামের বিন্দু পড়ে। এর ফলে মাছটি গর্ভবতী হয় এবং বানরের আকারে একটি মানব জন্মগ্রহণ করে, যাকে পরবর্তীতে রাবণের ভাই পাতালে থাকা অহিরাবনের দ্বাররক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here